Image description

১২ দিনের ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় তেহরানের আক্রমণে দখলদারদের যেসব ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল, সেগুলোর উল্লেখযোগ্য তথ্য এতদিন জনসমক্ষে তুলে ধরেনি তেল আবিব। তবে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছে ইসরায়েলের গণমাধ্যম।

দেশটির সরকারি সম্প্রচারক ‘কান’ জানায়, যুদ্ধ চলাকালে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র একাধিক গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে এবং এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের ঘটনা ঘটে, যা ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে কখনো প্রকাশ করেনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব তথ্য ইচ্ছাকৃতভাবে গণমাধ্যমে আসতে দেয়া হয়নি এবং যুদ্ধকে সফল প্রতিরক্ষামূলক বিজয় হিসেবে দেখানোর লক্ষ্যে প্রকৃত তথ্য নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। ইসরায়েল তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ কার্যকর বলে প্রচার চালালেও ‘কান’ স্বীকার করেছে যে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধে উচ্চমাত্রার কার্যকারিতা দেখিয়েছে এবং বাস্তব অর্থেই ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়েছে ইসরায়েলে।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, যুদ্ধক্ষেত্রে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা ছিল বাস্তবিক এক পরিস্থিতি, কিন্তু তা ইসরায়েলের সরকারি বিবরণে প্রতিফলিত হয়নি। ফলে দেশটির সাধারণ মানুষ যুদ্ধের প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে অন্ধকারেই রয়েছে গেছে।

চলতি বছরের ১৩ জুন, ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনা চলাকালে ইরানের বিরুদ্ধে আকস্মিক ও উসকানিমূলক আক্রমণ চালায় প্রথমে ইসরায়েল পরে যুক্তরাষ্ট্র। এই আক্রমণ যুদ্ধের সূচনা করে, যা ১২ দিন ধরে চলে। এতে ইরানে অন্তত এক হাজার ৬৪ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে সামরিক কমান্ডার, পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও সাধারণ নাগরিক ছিলেন। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা বর্ষণ করে।

জবাবে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডসহ কাতারের গুরুত্বপূর্ণ আল-উদেইদ মার্কিন সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এরপর ২৪ জুন উভয়ের সম্মতিতে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

যুদ্ধটি ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও ব্যর্থ সময়গুলোর একটি হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। ইসরায়েলের প্রত্যক্ষ সামরিক ব্যয় ছিল ১২.২ বিলিয়ন ডলার, অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও ব্যবসা বন্ধ হয়ে ক্ষতি হয়েছে ২১.৪ বিলিয়ন ডলার, ইরানি হামলায় ক্ষতি হয়েছে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার এবং ক্ষতিগ্রস্ত ভবন সরিয়ে নেওয়া ও পুনর্গঠনে ব্যয় হয়েছে ২ বিলিয়ন ডলার। যদিও ইসরায়েলের সরকারি পরিসংখ্যানেই যুদ্ধব্যয় দাঁড়ায় ১২ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার, তবে বিস্তৃত মূল্যায়নে মোট ব্যয় ধরা হচ্ছে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার।

এই অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি বাজেট ঘাটতি, প্রবৃদ্ধি হ্রাস, পর্যটন খাতের ক্ষতি, কর্মী প্রস্থান ও বিনিয়োগকারীদের অনাস্থার মতো দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবও রয়েছে। শেষ পর্যন্ত, ১২ দিনের যুদ্ধ প্রমাণ করে যে ইরানের মুখোমুখি হওয়ার জন্য ইসরায়েলের ২০ বছরের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে।

তেল আবিবকে আরও ক্ষতি এবং অর্থনৈতিক পতন রোধ করার জন্য যুদ্ধবিরতি চাইতে বাধ্য করেছে। ইসরায়েলিদের নিজেদের এবং তাদের মিডিয়া সূত্রের স্বীকারোক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি এই বিবরণটি পরাজয় এবং ক্ষতির আসল মাত্রার একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে।