ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ থামাতে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় চলমান শান্তি উদ্যোগের বৈঠকের পর হঠাৎই উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তার মেঘ ঘনীভূত হয়েছে। বাংলাদেশ সময় রোববার রাতে বিবিসির এক লাইভ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও মার্কিন সেনাবাহিনীর সচিব ড্যান ড্রিসকলকে জেনেভার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে বের হতে দেখা গেছে। নিরাপত্তা দল এবং সামরিক উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা তাঁদের ঘিরে রেখেছিলেন। এ সময় সাংবাদিকেরা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইউক্রেনকে ‘অকৃতজ্ঞ’ বলার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলেও—মার্কিন কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বৈঠকের আগে ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদলের বক্তব্যে আলোচনার পরিবেশ আশাব্যঞ্জক মনে হচ্ছিল। তাঁরা ইঙ্গিত দেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা ভালোর দিকেই এগোচ্ছে। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরই পরিস্থিতি বদলে যায়। মার্কিন প্রতিনিধিরা প্রায় আধঘণ্টা ১৮ তম তলায় আলোচনার কক্ষটিতে একা অবস্থান করার পর ওয়াশিংটন থেকে আসে এক তীব্র বার্তা। ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে বড় হাতের অক্ষরে লেখেন—‘ইউক্রেনের নেতারা আমাদের প্রচেষ্টার জন্য কোনো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেনি এবং ইউরোপ রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।’
ট্রাম্প আরও দাবি করেন—তিনি এমন এক যুদ্ধ উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন যা কখনো ঘটারই কথা ছিল না, আর এই যুদ্ধ সব পক্ষেরই ক্ষতি করছে। তাঁর অভিযোগ, ইউরোপের রাশিয়া থেকে তেল কেনা এবং ইউক্রেনের কৃতজ্ঞতা না দেখানো পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে।
তবে বিশ্লেষকেরা মত দিয়েছেন, ট্রাম্পের অভিযোগের সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। অতীতের বিভিন্ন ঘটনার উদাহরণ টেনে তাঁরা বলছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি বহুবার প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। দুই বছর আগে রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকে জেলেনস্কির বিরুদ্ধে ‘কৃতজ্ঞতা না দেখানোর’ অভিযোগ ওঠার পর থেকে জেলেনস্কি নিয়মিতভাবে মার্কিন সহায়তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আসছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে বৈঠকের পরও তিনি একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন।
এদিকে জেলেনস্কি এক্স মাধ্যমে জানিয়েছেন, তিনি ক্রোয়েশিয়া ও লুক্সেমবার্গের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে জেনেভার আলোচনার আপডেট দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমরা এমন এক ফলাফলের অপেক্ষায় আছি, যা সত্যিকারের এবং স্থায়ী শান্তির পথ তৈরি করবে।’ এ সময় তিনি ইউক্রেনকে যারা সমর্থন করছেন, বিশ্বের এমন সব নেতা ও জনগণের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শেষ করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২৮ দফা প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এই প্রস্তাবের পর ইউরোপের দেশগুলোও ২৪ দফার আরেকটি প্রস্তাব দিয়েছে। দুই প্রস্তাবের মধ্যে মৌলিক বেশ কিছু পার্থক্য দেখা গেছে।