Image description
 

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেওয়ার পরই দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প কোন কৌশলে এগোবেন তা স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। শপথ গ্রহণের পরপরই একাধিক নির্বাহী আদেশ স্বাক্ষর করেন এ রিপাবলিকান নেতা। যার মধ্যে রয়েছে অভিবাসন, জলবায়ু পরিবর্তন, বৈদেশিক সহায়তা সাময়িক স্থগিতসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আদেশ জারি করেন তিনি।

 
 

সোমবার দায়িত্ব নিয়েই নির্বাহী আদেশের ঝড় বইয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। ওভাল অফিসে প্রত্যাবর্তনের পর একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী আদেশে সই করেছেন তিনি। শুরুতেই বাতিল করেন পূর্বসূরি জো বাইডেনের আমলে গৃহীত ৭৮টি নির্বাহী আদেশ। এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরিয়ে নেওয়া, সীমান্তে জরুরি অবস্থা ঘোষণাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আদেশে স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প, যা প্রভাব ফেলবে বৈশ্বিক স্বার্থে। দেখে নেওয়া যাক দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ট্রাম্প যেসব নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন তা কীভাবে বিশ্ব রাজনীতির ভারসম্য বদলে দিতে পারে।

 

অভিবাসন ও সীমান্ত বন্ধ : অভিবাসীদের ঢল ঠেকাতে ওভাল অফিসে বসার পরপরই একগুচ্ছ নির্বাহী আদেশ ও ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। জন্মগত নাগরিকত্বের সংজ্ঞা নির্ধারণের আদেশ থেকে শুরু করে অবৈধ অভিবাসন বন্ধে সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণার মতো নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। ট্রাম্প তার উদ্বোধনী ভাষণে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সব অবৈধ প্রবেশ বন্ধ করা হবে এবং  লক্ষাধিক অবৈধ অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো হবে।      ট্রাম্প সীমান্ত বন্ধ করতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন। সীমান্তে অবৈধ মাদকদ্রব্য পাচার, মানব পাচার এবং অপরাধ বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর মেক্সিকো সীমান্তে যে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ অসমাপ্ত রয়ে গেছে, এবার সেই কাজ শেষ করতে পারেন ট্রাম্প।

 

অভিবাসন নীতি পরিবর্তন : ট্রাম্প বাইডেন প্রশাসনের একটি অভিবাসন নীতি পরিবর্তন করেছেন। ওই নীতি কিউবা, হাইতি, নিকারাগুয়া এবং ভেনেজুয়েলা থেকে ৩০ হাজার অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছিল। বাইডেন প্রশাসন এই নীতি সীমান্তে অবৈধ পারাপার বন্ধের লক্ষ্যে চালু করেছিল।

 

জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল : জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার বাতিলের নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে এখন থেকে যারা অবৈধভাবে বা শিক্ষা-পর্যটনসহ সাময়িক ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর যদি সন্তান জন্ম দিলেও তাদের সন্তানকে দেশটির নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। তবে যদি বাবা-মায়ের মধ্যে কেউ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হন, তাহলে সন্তান জন্মের পরেই তাকে দেশটির নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। দেড়শ বছরের পুরনো এই সাংবিধানিক অধিকারকে হাস্যকর হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে শুধু নির্বাহী আদেশ দিয়েই এ নীতি পরিবর্তন করা কঠিন। কেননা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। তাই তার এ পদক্ষেপ আইনগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। নাগরিকত্বের অধিকার বাতিল করতে হলে কংগ্রেসের উভয় কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট প্রয়োজন। ট্রাম্প কীভাবে এটি বাস্তবায়ন করবেন তা পরিষ্কার করেননি।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে প্রত্যাহার : ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু করার আদেশ দিয়েছেন। কভিড-১৯ মোকাবিলায় ডব্লিউএইচওর ভূমিকা নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে সমালোচনা করে আসছেন। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়া ট্রাম্প বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় এতদিন অন্য দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র অন্যায্য পরিমাণে অর্থ প্রদান করেছে।

 

প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে ফের সরে আসা : যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরিয়ে নিয়েছেন ট্রাম্প। এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঐতিহাসিক গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গতকারী দেশকে এক দশকের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে চলা বৈশ্বিক লড়াই প্রচেষ্টা থেকে সরিয়ে নিলেন ট্রাম্প। সোমবার ওয়াশিংটন ডিসির স্পোর্টস ভেন্যু ক্যাপিটাল ওয়ান অ্যারেনায় সমবেত সমর্থকদের সামনে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে প্রত্যাহারের নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প।

পানামা খাল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ঘোষণা : দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম দিনেই নিজেকে শান্তির দূত এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের কঠোর রক্ষক হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অভিষেক অনুষ্ঠানের ভাষণে তিনি পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন। ট্রাম্পের অভিযোগ, গুরুত্বপূর্ণ ওই পানিপথের চারপাশে চীনের প্রভাব বাড়ছে এবং চীনই কার্যত পানামা খাল পরিচালনা করছে।

বৈদেশিক সহায়তা সাময়িক বন্ধ : আগামী ৯০ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচি স্থগিত করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শপথ নেওয়ার পর নির্বাহী এক আদেশ জারির মাধ্যমে এ পদক্ষেপ নেন তিনি। তবে বৈদেশিক সহায়তা বন্ধের আদেশ মার্কিন তহবিলের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলবে সেটি পরিষ্কার নয়। কারণ দেশটির অনেক কর্মসূচি ইতিমধ্যে কংগ্রেসে তহবিল বরাদ্দ পেয়েছে। আর এসব অর্থ এরই মধ্যে বিতরণ অথবা ব্যয় করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি সহায়তা শিল্প ও আমলাতন্ত্রের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা প্রায়ই আমেরিকান স্বার্থ এবং মূল্যবোধের বিরোধিতা করে। প্রেসিডেন্টের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে মিল না থাকলে যুক্তরাষ্ট্র কোনো বৈদেশিক সহায়তা প্রদান করবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন : ট্রাম্প তার প্রথম নির্বাহী আদেশগুলোর একটিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন করে আমেরিকা উপসাগর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। একই আদেশে আলাস্কার মাউন্ট ডেনালির নাম পরিবর্তন করে মাউন্ট ম্যাককিনলি রাখার নির্দেশ দেন তিনি।

মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন : ট্রাম্প তার প্রথম নির্বাহী আদেশগুলোর একটিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তনকরে আমেরিকা উপসাগর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। একই আদেশে আলাস্কার মাউন্ট ডেনালির নাম পরিবর্তন করে মাউন্ট ম্যাককিনলি রাখার নির্দেশ দেন তিনি।

ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা বাতিল : ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে চরম ডানপন্থি ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী গোষ্ঠী ও ব্যক্তিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল বাইডেন প্রশাসন। ক্ষমতা গ্রহণ করেই পশ্চিম তীরের ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রথম দিনে ট্রাম্পের জারি করা বেশ কিছু আদেশ আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। বিশেষ করে সংবিধানের বিরুদ্ধে যাওয়া অভিবাসন-সংক্রান্ত আদেশগুলো আইনি জটিলতার সম্মুখীন হতে পারে।