Image description

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েই অভিবাসীদের নিয়ে একের পর এক নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব বাতিল থেকে শুরু করে সীমান্তে জরুরি অবস্থা জারি পর্যন্ত বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রথম দিনেই ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতিমধ্যে সমালোচনা শুরু হয়েছে।

এমনিতেই অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন থেকে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন ট্রাম্প। জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলে তাঁর সিদ্ধান্তের পর এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এসব সংগঠন। একটি সংগঠন বলেছে, ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত আমেরিকার মূল্যবোধ সমুন্নত রাখবে না। আরেকটি সংগঠন বলেছে, ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসীদের জীবন ধ্বংসের জন্য সক্রিয় তৎপরতা শুরু করেছে।

গতকাল সোমবার রাতে দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ট্রাম্প। অভিষেক অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণেই তিনি অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেন। ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশ বন্ধ করে দেবেন তিনি। অবৈধ অভিবাসীদের ‘অপরাধী’ হিসেবে বর্ণনা করে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে থাকা এমন লাখো অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো হবে।

জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব নিয়ে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি। তবে তাঁর প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রাম্প জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব সুবিধা বিলোপ করতে চান।

যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী দেশটিতে কোনো শিশুর জন্ম হলে জন্মসূত্রে সে মার্কিন নাগরিকত্ব পাবে। এ ক্ষেত্রে ওই শিশুর বাবা-মা কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, তা বিবেচ্য বিষয় হবে না।

জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে এই নিয়মে পরিবর্তন আনতে চান ট্রাম্প, যাতে নথিবিহীন; অর্থাৎ অবৈধ কোনো অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে সন্তান প্রসব করলে সেই শিশু স্বয়ংক্রিয়ভাবে মার্কিন নাগরিকত্ব পাবে না।

জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব সুবিধা নিয়ে নতুন নিয়ম ট্রাম্প কীভাবে কার্যকর করতে চান, তা এখনো স্পষ্ট নয়। কারণ, জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের এ সুবিধা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে সংরক্ষিত একটি বিষয়। ট্রাম্প যদি জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের এই সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিতে চান, তাহলে তাঁকে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ ও উচ্চকক্ষ সিনেটের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের এতে সমর্থন প্রয়োজন হবে।

ট্রাম্প দায়িত্ব নিয়েই ফেডারেল সরকারের সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন, কোনো অবৈধ অভিবাসী অথবা সাময়িক ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন, এমন কেউ সন্তান জন্ম দিলে সেই শিশুকে যেন মার্কিন নাগরিকত্ব–সংক্রান্ত নথি দেওয়া না হয়। ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তের তাৎক্ষণিক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো। তারা বলছে, ট্রাম্পের এ আদেশ অসাংবিধানিক।

ট্রাম্প এ নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করার পরপরই আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এএলসিইউ) নামের একটি সংগঠন জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এমন আদেশের বিরুদ্ধে তারা মামলা করবে। সংগঠনটি সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া শিশুকে নাগরিকত্ব না দেওয়ার আদেশ শুধু অসাংবিধানিক নয়, একই সঙ্গে তা আমেরিকার মূল্যবোধের বেপরোয়া ও নির্মম প্রত্যাখ্যান।’

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর এক প্রতিবেদনে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের প্রভাব বিষয়ে তুলে ধরা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ওই আদেশের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া সেই সব শিশুকে নাগরিকত্ব না দেওয়ার; যাদের মা অবৈধভাবে বা পর্যটনসহ বিভিন্ন ভিসায় দেশটিতে অবস্থান করছেন, শিশুটির বাবা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন বা আইনসংগতভাবে স্থায়ী বাসিন্দা নন।

এখন থেকে ৩০ দিন পর যেসব শিশু জন্ম নেবে, তাদের মধ্যে কারও বাবা–মা দুজনের কোনো একজন যদি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক না হন বা গ্রিন কার্ডধারী না হন, তাহলে সেই শিশুকে যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট ও ভিসা দেওয়া হবে না।

এক শতব্দীরও আগে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের এক আদেশে বলা হয়েছিল যে সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর আলোকে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া বিদেশি বাবা–মায়ের সন্তানেরা দেশেটর নাগরিকত্ব পাবে। এর ব্যতিক্রম হবে শুধু বাবা–মা যদি বিদেশি কূটনীতিক হন এবং যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী তাঁরা কূটনৈতিক দায়মুক্তি পেয়ে থাকেন।

অবশ্য অভিবাসনে কড়াকড়ি আরোপের পক্ষের অনেক আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টের ১৮৯৮ সালের ওই আদেশকে আরও বৃহত্তর পরিসরে দেখছেন। বর্তমান সুপ্রিম কোর্টও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিয়ে আরও কড়াকড়ি আরোপের বিষয়টি অনুমোদন করতে পারে। আবার কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া ট্রাম্পের এই নির্বাহী আদেশ দেওয়ার এখতিয়ার আছে কি না, বিষয়টি আদালতে মীমাংসা হবে কি না, তা–ও এখনো নিশ্চিত নয়।