Image description

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার উপস্থিত থাকার দাবিতে প্রচারিত পোস্ট

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জতার গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। তাঁর পাসপোর্ট বাতিল করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এবং তিনি এখনো ভারতেই অবস্থান করছেন। কিন্তু তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন বলে দাবি করে নানা তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল সোমবার ওয়াশিংটন ডিসির স্থানীয় সময় দুপুরের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্টের শপথ নেন ট্রাম্প। এই শপথ অনুষ্ঠানে অনেক আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বও উপস্থিত ছিলেন। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাও উপস্থিত ছিলেন— এমন দাবিতে একটি বেসরকার টেলিভিশনের লোগোসহ একটি ফটোকার্ড সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। তাতে লেখা, ‘ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন শেখ হাসিনা।’

‘আওয়ামী লীগ পরিবার’ নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে করা যমুনা টেলিভিশনের লোগোসম্বলিত ফটোকার্ডসহ পোস্টটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই পোস্টে আট শতাধিক রিঅ্যাকশন পড়েছে। পাশাপাশি এম এ মমিন ভূঁইয়া (M A Momin Bhuiyan) অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচারিত পোস্টটিও ছড়িয়েছে বেশ। এটি ১৬৯ বার শেয়ার হয়েছে এবং এতে ১৩১টি কমেন্ট পড়েছে। এসব কমেন্টে অনেকে বিষয়টিকে গুজব বলে উল্লেখ করেছেন। আবার কোনো কোনো অ্যাকাউন্ট থেকে দাবিটিকে সত্য ভেবেও কমেন্ট করা হয়। মো. মাসুদুল করিম (MD Masudul Karim) লিখেছে, ‘আলহামদুলিল্লাহ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয় শেখ হাসিনা।’

এটি যমুনা টেলিভিশনের ফটোকার্ড কিনা, তা যাচাই করার চেষ্টা করে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ। ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি প্রকাশের তারিখ ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি।

তবে যমুনা টেলিভিশনের ওয়েবসাইট, ফেসবুক ও ইউটিউবে এমন কোনো ফটকার্ড কিংবা একই বিষয়ে কোনো সংবাদ বা তথ্য খুঁজে পায়নি আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ।

পাশাপাশি যমুনা টেলিভিশনের ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডের সাথে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডের কিছু অমিল দেখা যায়। যেমন: যমুনা টেলিভিশনের ফন্টের সঙ্গে ফটোকার্ডের ফন্টের মিল পাওয়া যায়নি।

যমুনা টেলিভিশনের ফটোকার্ডের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডের ফন্টের অমিল

যমুনা টেলিভিশনের ফটোকার্ডের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডের ফন্টের অমিল

যমুনা টেলিভিশন এমন ফটোকার্ড প্রকাশ করেছে কিনা তা নিশ্চিত হতে প্রতিষ্ঠানটির নিউ মিডিয়ায় প্রধান রুবেল মাহমুদের সাথে আমাদের কথা হয়। তিনি বলেন, ‘যমুনা টেলিভিশন এমন কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। এটি ভুয়া।’

শেখ হাসিনা কি আসলেই গতকাল অনুষ্ঠিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন?— এই প্রশ্নকে সামনে রেখে আমরা এই বিষয়ে গুগলে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ডস সার্চ করি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে বিদেশি কারা উপস্থিত থাকবেন, সে বিষয়ে আল-জাজিরায় একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। তবে এই তালিকায় শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

একই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের টাইম ম্যাগাজিনেও একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদনেও শেখ হাসিনার উপস্থিতির বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

ফটোকার্ডে থাকা ছবিটির বিষয়ে জানতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে চ্যানেল ২৪-এর ইউটিউব চ্যানেলের একটি প্রতিবেদনে একই দৃশ্য পাওয়া যায়।

যমুনা টেলিভিশনের ভুয়া ফটোকার্ডে থাকা ছবির সাথে ২০১৭ সালের চ্যানেল ২৪ এর প্রতিবেদনের সাদৃশ্য

যমুনা টেলিভিশনের ভুয়া ফটোকার্ডে থাকা ছবির সাথে ২০১৭ সালের চ্যানেল ২৪ এর প্রতিবেদনের সাদৃশ্য

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এটি ২০১৭ সালে জাতিসংঘে সংস্কার বিষয়ক বৈঠকের সময়ের দৃশ্য। শেখ হাসিনা তখন রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর রোহিঙ্গা ইস্যুতে কথা হয়। রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে ট্রাম্পের কাছ থেকে কোনো প্রত্যাশা নেই বলে তিনি জানিয়েছিলেন।

সেসময় একই বিষয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম ডব্লিউআইওএনের এক প্রতিবেদনেও একই দৃশ্য দেখা যায়।

সুতরাং, ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার উপস্থিত থাকার তথ্যটি মিথ্যা এবং যমুনা টেলিভিশনের নামের ফটোকার্ডটিও ভুয়া। প্রকৃতপক্ষে, ২০১৭ সালে জাতিসংঘে এক বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে শেখ হাসিনার কথোপকথনের দৃশ্যকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগদানের দৃশ্য দাবিতে ছড়ানো হয়েছে।