Image description

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনের জন্য ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রাইমারিতে দলের মনোনয়ন জিতে মার্কিন রাজনীতিতে আলোড়ন তুলেছেন ৩৩ বছর বয়সী জোহরান মামদানি। প্রচারণার সময় বিভিন্ন ভাষায় ভিডিও বানানোর পাশাপাশি তিনি বাংলাতেও একটি ক্যাম্পেইন ভিডিও তৈরি করেছেন, সেখানে লিটল বাংলাদেশ কেনসিংটনের বাঙালি কাউন্সিল মেম্বার শাহানা আরিফকে সঙ্গে নিয়ে ‘র‍্যাংক চয়েস ভোটিং’ পদ্ধতি বাঙালি মিষ্টির প্লেটের উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করতে দেখা যায় তাকে। ভিডিওর শেষ দিকে মামদানি হাসতে হাসতেই শাহানাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আমার বাংলা ভালই, না?’ শাহানা ইতস্তত করে জবাব দেন, ‘খারাপ না।’

এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাঙালি ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। ভারতীয় অরিজিনের হলেও হিন্দি ও উর্দুর পাশাপাশি বাংলায়ও সাবলীলভাবে কথা বলতে পারায় অনেকেই তাকে দেখে অবাক হন। নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসসহ বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় প্রচারের সময়ও তাকে দোকানপাট ও মার্কেটে টুকরো টাকরা বাংলায় কথা বলতে দেখা গেছে।

ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে হেভিওয়েট অ্যান্ড্রু কুওমোকে হারিয়ে মনোনয়ন নিশ্চিত করার পর দেওয়া বক্তব্যেও মামদানি বিশেষভাবে বাংলাদেশি আন্টিদের অবদান স্মরণ করেন। এতে অনেকে ভাবছেন, তার বাংলা-প্রীতি কি শুধু ভোটের জন্য, না কি এর পেছনে গভীর ব্যক্তিগত সংযোগও রয়েছে।

মামদানির বাংলা-সংযোগের মূল উৎস তার মা। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র পরিচালক মীরা নায়ার। ওড়িশার রাউরকেল্লায় জন্ম ও ভুবনেশ্বরে বড় হওয়া মীরা নায়ার স্কুলজীবনেই বাঙালি সংস্কৃতি ও ভাষার ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে ছিলেন। তার গানের শিক্ষকও ছিলেন একজন বাঙালি, আর তিনি দিব্যি বাংলা বোঝেন ও কিছুটা বলতে পারেন। কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে সেটির প্রমাণও তিনি দিয়েছেন।

মীরা নায়ারের বিখ্যাত ছবির মধ্যে অন্যতম নেমসেক, যা পুলিতজার-জয়ী লেখক ঝুম্পা লাহিড়ীর উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এবং আমেরিকায় প্রথম প্রজন্মের অভিবাসী বাঙালি দম্পতির গল্প নিয়ে তৈরি। ইরফান খান ও টাবুকে অভিনয় করাতে তিনি বাংলা উচ্চারণ ও অভিবাসী বাঙালিদের আবহ তুলে ধরতে বিশেষ পরিশ্রম করেছিলেন।

 

মজার বিষয়, এই নেমসেক বানাতে বড় ভূমিকা ছিল তার কিশোর ছেলে জোহরান মামদানির। ২০০৭ সালে মীরা নায়ার যখন হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য অর্ডার অব দ্য ফিনিক্স পরিচালনার মোটা অঙ্কের প্রস্তাব পান, তখন তার ছেলে জোহরান। যার বয়স তখন মাত্র ১৪। তাকে বলেন, ‘হ্যারি পটার বানানোর জন্য অনেক পরিচালক আছে, কিন্তু নেমসেক বানানোর জন্য তুমি ছাড়া কেউ নেই। এরপরই নেমসেক নির্মাণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।

তাই দক্ষিণ এশীয় অভিজাত বংশোদ্ভূত হয়েও ‘আমেরিকা বর্ন কনফিউজড দিশি’ বলে পরিচিত প্রজন্মের প্রতিনিধিত্বকারী মামদানি নিজের পরিচয়, মূল্যবোধ ও রাজনীতিতে স্পষ্ট অবস্থান রাখেন। তার প্রচারণায় ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু ও বাংলায় ভিডিও তৈরি করা হয়, যার কিছুতে বলিউডের দিওয়ার চলচ্চিত্রের দৃশ্যও ব্যবহার করা হয়। 'মেরে পাস মা হ্যায়' এই বিখ্যাত সংলাপের মেজাজে যেন মামদানি নিজের প্রচারণায়ও বারবার জানান, তার সাফল্যের শক্তি তার ক্যারিশমা ও রাজনৈতিক দক্ষতার পাশাপাশি মা মীরা নায়ারের কাছ থেকেও পাওয়া।

জোহরান মামদানি আফ্রিকার উগান্ডায় জন্ম নেন এবং কয়েক বছর আগে মার্কিন নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। তার বাবা মাহমুদ মামদানি একজন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত লেখক-শিক্ষাবিদ। মা-বাবার প্রগতিশীল লিবারেল চিন্তা, ফিল্মমেকিং ও সামাজিক ন্যায়ের মূল্যবোধই তার রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তি হয়ে উঠেছে।