ব্রাজিলের রিও দে জেনেইরো রাজ্যের পেনহা ফাভেলা শহরে পুলিশের প্রাণঘাতী এক অভিযানের পর ৬০ জনেরও বেশি মানুষের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ব্যাপক পরিসরের অভিযানের একদিন পর সেখানকার একটি সড়কে এসব মরদেহ স্তূপ করে রাখা অবস্থায় পাওয়া গেছে।
বুধবার স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পেনহা ফাভেলা শহরের ইতিহাসে সংঘবদ্ধ বিভিন্ন অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার সবচেয়ে প্রাণঘাতী পুলিশি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
এর আগে, মঙ্গলবার রাজ্য কর্তৃপক্ষ বলেছিল, শহরের একটি সংঘবদ্ধ মাদক চক্রের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানে অন্তত ৬৪ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে পুলিশের চার কর্মকর্তাও রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, নিখোঁজ স্বজনদের খুঁজতে গিয়ে এলাকাবাসী তাদের বসতির পেছনের বনাঞ্চল থেকে অনেক লাশ উদ্ধারের পর রাস্তায় স্তূপ করে রেখেছে। ছবিতে দেখা গেছে, শোকাহত আত্মীয়-স্বজন ও উৎসুক লোকজন দীর্ঘ সারিতে সাজানো মরদেহের দুই পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। কিছু মরদেহ কাপড় কিংবা ব্যাগ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।
পুলিশি অভিযানে নিহত এক তরুণের মা তাউয়া ব্রিতো। তিনি বলেন, আমি শুধু আমার ছেলেকে এখান থেকে নিয়ে গিয়ে সৎকার করতে চাই।
রিওতে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ৩০ সংশ্লিষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বৈশ্বিক মেয়রদের সি৪০ সম্মেলন এবং ব্রিটিশ প্রিন্স উইলিয়ামের আর্থশট পুরস্কারসহ কয়েকটি বৈশ্বিক অনুষ্ঠান আয়োজনের কয়েক দিন আগেই এই অভিযান চালানো হয়েছে।
গত এক দশকে রিও ২০১৬ সালের অলিম্পিক, ২০২৪ সালের জি২০ সম্মেলন এবং জুলাইয়ে ব্রিকস সম্মেলনের মতো বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। তবে সেসবের কোনও আয়োজন ঘিরে মঙ্গলবারের মতো সহিংসতা দেখা যায়নি।
রাজ্য সরকার বলেছে, কমান্ডো ভারমেলিও নামের একটি মাদকচক্রের বিরুদ্ধে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এই চক্রটি শহরের দরিদ্র ও ঘনবসতিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকায় মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দ্য সিলভা মঙ্গলবার মালয়েশিয়া সফর শেষে ব্রাসিলিয়ায় ফিরে এলেও এখন পর্যন্ত অভিযানের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। আর দেশটির বিচারমন্ত্রী বলেছেন, রাজ্য কর্তৃপক্ষ ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে কোনও সহায়তার অনুরোধ জানায়নি।
বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন সামরিক ধাঁচের এই অভিযানে বিপুল প্রাণহানির তীব্র সমালোচনা করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় বলেছে, এটি ব্রাজিলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর পুলিশের প্রাণঘাতী অভিযানের চলমান প্রবণতাকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।
এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, আমরা কর্তৃপক্ষকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের আওতায় তাদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আমরা এই ঘটনায় দ্রুত ও কার্যকর তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।
সূত্র: রয়টার্স।