টানা ১৫ মাসের যুদ্ধের পর গাজায় নতুন একটি যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে রবিবার থেকে। এদিন স্থানীয় সময় বেলা সোয়া ১১টায় এই যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। হামাস প্রথম দফায় তিন নারী জিম্মির তালিকা প্রকাশের পরই এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।
যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর গাজার হাজার হাজার গৃহহীন বাসিন্দা বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে।
এর আগে জিম্মিদের তালিকা না পাওয়ায় যুদ্ধবিরতি পিছিয়ে দেয় ইসরায়েল। হামাসের নাম প্রকাশের বিলম্বের মধ্যেই স্থানীয় সময় সকালে গাজায় বিমান হামলা চালায় ইহুদি রাষ্ট্রটি। এতে অন্তত ১৯ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
পরে হামাস এক টেলিগ্রাম পোস্টে ইসরায়েলের তিনজন নারী জিম্মির নাম প্রকাশ করে। যাদের যুদ্ধবিরতির চুক্তির আওতায় প্রথম ধাপে মুক্তি দেওয়া হবে। ওই তিনজন জিম্মির তালিকা প্রকাশের পরই সোয়া ১১টায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
স্থানীয় সময় দুপুরের পর ওই নারী জিম্মিদের ফেরত আনতে রেডক্রসের একটি দল গাজার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। তাদের মাধ্যমেই ওই তিন ইসরায়েলি জিম্মিকে হস্তান্তর করা হয় বলে ইসরায়েলি মিডিয়া ও রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে।
ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরই এর বিরোধিতা করে পদত্যাগ করেন দেশটির কট্টর ডানপন্থী নেতা ও জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গাভির।
যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার মাত্র ১৫ মিনিট পর রবিবার গাজায় মানবিক সাহায্যবাহী ট্রাকগুলো ঢুকতে শুরু করে বলে এক্স -এর পোস্টে জানান জাতিসংঘের সহায়তা বিষয়ক কর্মকর্তা জোনাথন হুইটাল।
হামাসের হাতে গাজায় বন্দি তিন ইসরায়েলি রোমি গোনেন, এমিলি দামারি ও ডরন স্টেইনব্রেচারের তালিকা প্রকাশের পরই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। টেলিগ্রামে এক পোস্টে হামাস এই নাম প্রকাশ করে। তাদের তিনজনই হামাসের হাতে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর অপহৃত হয়েছিলেন।
চুক্তি অনুযায়ী হামাস তিনজন বন্দির নাম প্রকাশ করলেও তার বিপরীতে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি বন্দির তালিকা প্রকাশ করেনি।
রবিবার হামাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী প্রতিটি ইসরায়েলি বন্দি মুক্তির বিনিময়ে ৩০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে। সেই হিসাবে রবিবার ৯০ জন মুক্তি পায়। ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও রয়েছে।
গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তারা বন্দি বিনিময়ের জন্য রেড ক্রসের সঙ্গে কাজ করবে এবং মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য দক্ষিণ শহর খান ইউনুসের গাজা ইউরোপীয় হাসপাতালে পাঠানো হবে।
যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারী অন্যতম দেশ মিশর শনিবার জানিয়েছিল, যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় প্রথম ছয় সপ্তাহে মোট ১,৮৯০ জন ফিলিস্তিনি মুক্তি পাবে। চুক্তির আওতায় ইসলায়েলি বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত ৭৩৪ জন বন্দি ও আটক ব্যক্তির তালিকা প্রকাশ করে। যাদেরকে মুক্তি দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছি ইসরায়েল।
তবে ওই ৭৩৪ জন কি ওই ১৮৯০ জনের তালিকার মধ্যে রয়েছে কি না সেটি এখনো নিশ্চিত না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ওই ১৮৯০ জনের মধ্যে থেকেই ৭৩৪ জনের তালিকা প্রকাশ করেছে ইসরায়েল। এই ৭৩৪ জনের বাইরে ইসরায়েল বাকি ১ হাজার ১৫৬ জন বন্দির বিষয়ে এখনো কিছু জানায়নি।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল বন্দি বিনিময়। তবে প্রতি দফায় কতজন জিম্মি কোন দেশ মুক্তি দেবে সেটি এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে হামাস দাবি করছে, যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী প্রতি একজন ইসরায়েলি বন্দির মুক্তির জন্য ৩০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে।
যুদ্ধবিরতি শুরুর পর বন্দিদের পরিবার ও স্বজনেরা বিভিন্ন কারাগারের সামনে জড়ো হতে শুরু করেছে। আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে ফিলিস্তিনিরা। সেখান থেকে তোলা বিভিন্ন ছবিতে দেখা গেছে, লাইন ধরে বাড়ির পথে হাঁটছেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি।
প্রকাশিত ছবিতে পোশাক এবং অন্যান্য জিনিসপত্র বহনকারী লোকদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। কেউ আবার গাড়ির কনভয়ে চড়ে বাড়ির পথে ফিরছেন। কিছু গাড়ি আবার ফিলিস্তিনি পতাকাধারী লোকে ভরা।
এর আগে রবিবার সকাল সাড়ে ৮টায় গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হামাস ইসরায়েলি জিম্মিদের তালিকা পাঠানোতে দেরি করায় তারা আবার বিমান হামলা শুরু করে। এই হামলায় ১৯ জন নিহত হয়েছে বলে জানায় হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।