ইসরায়েল গাজা ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে, তুরস্কের ইস্তানবুলে অনুষ্ঠিত গাজা ট্রাইব্যুনাল রোববার (২৬ অক্টোবর) তাদের চূড়ান্ত রায় ও ‘নৈতিক রায়’ ঘোষণায় এমনটি জানায়। ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবিলম্বে তা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানায়। চার দিনব্যাপী গণশুনানিতে আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকার কর্মী ও সাক্ষীরা ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে ‘পদ্ধতিগত অপরাধ’ হিসেবে তুলে ধরেন। এতে সভাপতিত্ব করেন আন্তর্জাতিক আইনবিদ ক্রিস্টিন চিনকিন। খবর আনাদোলু এজেন্সির।
রায়ে বলা হয়, ‘যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কারণে আইন নিস্ক্রিয় হয়ে যায়, তখন বিবেকই হয়ে ওঠে শেষ বিচারক।’ ট্রাইব্যুনাল এটিকে ‘গণহত্যার সত্য প্রমাণের এক মূল্যবান দলিল’ হিসেবে আখ্যায়িত করে।ট্রাইব্যুনাল জানায়, ইসরায়েল গাজায় ‘পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ’ চালাচ্ছে-ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, বিদ্যালয়, পানি ও বিদ্যুৎ অবকাঠামো ধ্বংস করে সমাজ ও সংস্কৃতিকে নিশ্চিহ্ন করছে।
রায়ে উল্লেখিত অপরাধের মধ্যে রয়েছে- খাদ্য ও পানির অভাবে ইচ্ছাকৃত অনাহার সৃষ্টি, পরিবেশ ধ্বংস ও বসতি ধ্বংস, স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসা অবকাঠামোতে হামলা, প্রজননস্বাস্থ্য ধ্বংস, শিক্ষা ব্যবস্থার ধ্বংস, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, নির্যাতন, যৌন সহিংসতা ও রাজনৈতিক হত্যা।
রায়ে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো ইসরায়েলকে অস্ত্র, কূটনৈতিক সুরক্ষা ও গোয়েন্দা সহায়তা দিয়ে “সহযোগী ও সহঅপরাধী’ হিসেবে পরিণত হয়েছে-যা আন্তর্জাতিক আইনে গণহত্যা প্রতিরোধে তাদের দায়বদ্ধতার লঙ্ঘন।
রায়ে আরও বলা হয়েছে-ইসরায়েলকে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংগঠন থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা, ইউনাইটিং ফর পিস প্রক্রিয়া চালু করে ফিলিস্তিনে আন্তর্জাতিক সুরক্ষাবাহিনী পাঠানো, সব অপরাধী ও সহযোগীকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিকভাবে জবাবদিহির আওতায় আনা, ইসরায়েলবিরোধী বৈশ্বিক বয়কট ও আন্দোলন জোরদার করা।
ট্রাইব্যুনাল স্পষ্ট করে জানায়, ‘সংগ্রাম ইহুদিদের সঙ্গে নয়, বরং বর্ণবাদী, ঔপনিবেশিক ও শ্রেষ্ঠত্ববাদী মতাদর্শ-জায়োনিজমের বিরুদ্ধে।’ শেষ বক্তব্যে ট্রাইব্যুনাল সতর্ক করে দেয়-‘নীরবতা নিরপেক্ষতা নয়; নীরবতা হলো অপরাধে অংশগ্রহণ, নিরপেক্ষতা হলো অশুভের কাছে আত্মসমর্পণ।’