ফরাসি প্রেসিডেন্টের স্ত্রী ব্রিজিত ম্যাক্রোঁকে সাইবার হয়রানির অভিযোগে আজ সোমবার প্যারিসে দশজনের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হচ্ছে। গত জুলাইয়ের শেষের দিকে তিনি এবং রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি মানহানির মামলা দায়ের করার পর এই বিচার শুরু হয়।
ফ্রান্স এবং দেশটির বাইরে অনলাইনে একটি গুজব ছড়িয়ে পড়ে, ফরাসি ফার্স্ট লেডি ব্রিজিত একজন পুরুষ হিসেবে জন্মে ছিলেন। ভিত্তিহীন লিঙ্গ সংক্রান্ত এ দাবির বিরুদ্ধে ওই মামলা করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে প্রেসিডেন্ট দম্পতিকে লক্ষ্য করে অসমর্থিত এই দাবিটি করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের মধ্যে ২৪ বছরের বয়সের ব্যবধান নিয়েও সমালোচনা করা হচ্ছে। এই মামলার দশজন আসামি। এর মধ্যে আটজন পুরুষ এবং দুইজন নারী।
যাদের বয়স ৪১ থেকে ৬০ বছর। সাইবার-হয়রানির মামলাটির বিচার প্যারিসের একটি ফৌজদারি আদালতে করা হবে। দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। তাদের বিরুদ্ধে ব্রিজিতের লিঙ্গ এবং যৌনতা সম্পর্কে অসংখ্য বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এমনকি তার স্বামীর সঙ্গে তার বয়সের পার্থক্যকে ‘শিশু যৌন নির্যাতন’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বলে প্রসিকিউটরা জানিয়েছেন।
ফরাসি ফার্স্ট লেডি ২০২৪ সালের আগস্টে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। যার ফলে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর এবং ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাইবার-হয়রানির তদন্ত শুরু হয়। অসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়। ব্রিজিতের আইনজীবী এএফপির কারা কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি এবং তিনি শুনানিতে উপস্থিত থাকবেন কি না তাও জানা যায়নি।
আসামিদের মধ্যে রয়েছেন ৪১ বছর বয়সী অরেলিন পোয়ারসন-আটলান। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘জো সাগান’ নামে পরিচিত। আসামিদের মধ্যে নারীও রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ২০২২ সালে ব্রিজিত মানহানির মামলা করেন। ৫১ বছর বয়সী ডেলফাইন জে একজন নিজেকে আধ্যাত্মিক মানুষ হিসেবে দাবি করেন। তিনি ‘আমান্দিন রোয়া’ ছদ্মনামে পরিচিত।
২০২১ সালে তিনি তার ইউটিউব চ্যানেলে স্বঘোষিত সাংবাদিক নাতাশা রে-এর সঙ্গে চার ঘন্টার একটি সাক্ষাৎকার পোস্ট করেছিলেন। যেখানে তিনি অভিযোগ করেছিলেন, ব্রিজিতের পূর্ব নাম ট্রগনু এবং তিনি জ্যঁ মিশেল ট্রগনু নামে একজন পুরুষ ছিলেন, এটি আসলে ব্রিজিতের ভাইয়ের নাম।
২০২৪ সালে আপিলের রায় বাতিল হওয়ার আগে এই দুই নারীকে ব্রিজিত এবং তার ভাইকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ফার্স্ট লেডি তখন থেকে মামলাটি দেশের সর্বোচ্চ আপিল আদালতে নিয়ে গেছেন। ২০১৭ সালে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর নির্বাচনের প্রথম দিকেই এই দাবিগুলো আরো জোরদার করা হয়, যেখানে ট্রান্সজেন্ডার অধিকার আমেরিকান সংস্কৃতি যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে একটি ইস্যু হয়ে উঠেছে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও তার স্ত্রী ফার্স্ট লেডি ব্রিজিত জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থি পডকাস্টার ক্যান্ডেস ওউন্সের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন। এই মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ‘ব্রিজিত একজন পুরুষ’—এমন ভুয়া দাবি প্রচারের মাধ্যমে ওউন্স একটি পরিকল্পিত মানহানিকর প্রচারণা চালিয়েছেন।
মামলায় বলা হয়, ওউন্স তার ইউটিউব পডকাস্ট সিরিজ বিকামিং ব্রিগেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিকবার দাবি করেছেন, ব্রিজিত ম্যাখোঁ আসলে জন্মে ছিলেন পুরুষ হিসেবে, যার নাম ছিল ‘জ্যঁ-মিশেল ট্রগনু’। তাদের মার্কিন আইনজীবীর মতে, এই দম্পতির কাছে ‘বৈজ্ঞানিক’ প্রমাণ এবং ছবি আছে, যা প্রমাণ করে ফার্স্ট লেডি ট্রান্সজেন্ডার নন। সূত্র: এএফপি
শীর্ষনিউজ