Image description
 

ইউক্রেন যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের মাঝে রাশিয়ার সামরিক পোশাক পরে দাঁড়িয়ে আছেন এক তরুণ। হাতে স্নাইপার রাইফেল, চারপাশে বোমা আর বিস্ফোরণের ধোঁয়া। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন ভাইরাল এই ভিডিও। তরুণের নাম— সোহেল সর্দার, বাংলাদেশে মাদারীপুরের শিবচরের বাসিন্দা।

 

ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি রাশিয়ার পক্ষে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন। সোহেলের ভাষায়— “আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের ২০০ জনের ইউনিটে আমি নাম্বার ওয়ান স্নাইপার হইছি। সরকারও পুরস্কৃত ঘোষণা করছে আমাকে।”

ক্যামেরার সামনে কখনো হাতে তুলে ধরছেন বিস্ফোরিত ড্রোন, কখনো দেখাচ্ছেন যুদ্ধক্ষেত্রের ভয়াবহ ধ্বংসচিত্র। একটি ভিডিওতে তিনি বলেন— “ওরা ছোট ছোট ড্রোনে আমাদের রুমের তথ্য নেয়। একটা ড্রোন আসে, আমি গুলি করি। সেকেন্ডের মধ্যেই সেটা পড়ে যায়।”

 

সোহেলের এই ভিডিওগুলো বাংলাদেশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে আগুনের মতো। লাখো মানুষ তা দেখেছেন— কেউ আতঙ্কে, কেউবা বিস্ময়ে। কেউ লিখেছেন, “ওটা যুদ্ধ না, মৃত্যুর সঙ্গে খেলা।”

 

ফেসবুক প্রোফাইল ঘেঁটে জানা গেছে, ঢাকার কদমতলায় একটি স্কুলে পড়াশোনা করতেন সোহেল। ধারণা করা হচ্ছে, কাজের প্রলোভনে রাশিয়ায় পাড়ি জমালেও পরে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। এখন তার প্রতিটি দিন কাটছে রণক্ষেত্রের মাঝখানে, ড্রোনের গর্জন আর মৃত্যুভয়ের ছায়ায়।

ব্রিটিশ সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, গত এক বছরে প্রায় এক হাজার বিদেশি রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করেছে। তাদের বড় অংশই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নাগরিক, যার মধ্যে রয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি তরুণ।

রাশিয়ার সৈনিকদের মুখে এখন শোনা যায়— “রাশিয়া মুছ, রাশিয়া বাঘাতির, বাংলাদেশ মুছ, বাংলাদেশ বাঘাতি!”

তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি— অনেক বাংলাদেশি যুবককে কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাশিয়ায় পাঠিয়ে জোর করে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। কেউ নিখোঁজ, কেউ নিহত, কেউ আবার যুদ্ধের ভয়াবহতা নিজের মোবাইল ক্যামেরায় বন্দি করছেন।

সোহেল সর্দারের ভিডিওগুলো তাই শুধু ভাইরাল ক্লিপ নয়— তা হয়ে উঠেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশের হারিয়ে যাওয়া তরুণদের করুণ বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।