Image description

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শীর্ষ সম্মেলন (আসিয়ান) উপলক্ষে এই সপ্তাহান্তে মালয়েশিয়ায় যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এটি মালয়েশিয়ায় কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের অন্যতম বিরল সফর, যা দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের জন্য একদিকে বড় কূটনৈতিক অর্জন হলেও অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সূক্ষ্ম ভারসাম্য রক্ষার চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

মালয়েশিয়া দীর্ঘদিন ধরে নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে আসছে। ট্রাম্পের আগে মাত্র দুইজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট—বারাক ওবামা ও লিন্ডন বি জনসন—দেশটি সফর করেছিলেন। আসিয়ান সম্মেলনে এবার ট্রাম্পের পাশাপাশি জাপান, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার নেতারা অংশ নিচ্ছেন, যদিও চীন, ভারত ও রাশিয়ার নেতারা উপস্থিত থাকছেন না।

মালয়েশিয়া একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য অংশীদার। যুক্তরাষ্ট্র দেশটির শীর্ষ বিদেশি বিনিয়োগকারী ও তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার, অন্যদিকে চীন সর্ববৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ও তৃতীয় বৃহত্তম বিনিয়োগকারী। তবে দক্ষিণ চীন সাগর ও তাইওয়ান ইস্যুতে দুই পরাশক্তির উত্তেজনা বাড়ার ফলে মালয়েশিয়ার জন্য নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে।

আনোয়ার ইব্রাহিম এই সফরকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে আসিয়ানের অবস্থান শক্তিশালী করার সুযোগ হিসেবে দেখছেন। তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ফিলিস্তিন ইস্যুসহ সংবেদনশীল বিষয়গুলো আলোচনার পরিকল্পনা করেছেন। তার লক্ষ্য হলো উভয় পরাশক্তির সঙ্গে গঠনমূলক সম্পর্ক বজায় রেখে মালয়েশিয়ার স্বার্থকে সর্বাধিক করা।

ট্রাম্পের সফরে মালয়েশিয়ার রপ্তানি পণ্যের ওপর ১৯ শতাংশ মার্কিন শুল্ক ও চীনের বিরল মৃত্তিকা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব আলোচনার প্রধান বিষয় হবে। মালয়েশিয়া চায় নিয়ম-ভিত্তিক বৈশ্বিক বাণিজ্য টিকিয়ে রাখা, যাতে রাজনৈতিক মতভেদের পরেও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর হয়। দেশটির অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র-চীনের দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক উত্তেজনা মালয়েশিয়ার জন্য সবচেয়ে নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।

এ সফরে ট্রাম্প থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে একটি শান্তি চুক্তির সাক্ষী হবেন বলেও আশা করা হচ্ছে। গত জুলাইয়ে সীমান্ত সংঘাতে দুই দেশের অন্তত ৩৮ জন নিহত হয়েছিল। চুক্তি বাস্তবায়িত হলে এটি আসিয়ানের আঞ্চলিক মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা আরও শক্তিশালী করবে।

দেশের অভ্যন্তরে ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে আনোয়ার সমালোচনার মুখে পড়েছেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদসহ বিরোধীরা দাবি করেছেন, ট্রাম্পের যুদ্ধবিষয়ক ভূমিকার কারণে তাকে মালয়েশিয়ায় স্বাগত জানানো উচিত নয়। তবে আনোয়ার বলেছেন, কূটনীতি হলো বাস্তববাদী পদক্ষেপ, যা দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য অপরিহার্য। তিনি জোর দিয়ে বলেন, পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে ভারসাম্য ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখাই এখন প্রধান লক্ষ্য।

সূত্র: বিশ্লেষণ আল-জাজিরা