Image description
 

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যের জবাবে রাশিয়া বলেছে, ভারতের অর্থনীতির জন্য রুশ তেল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এই বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে ‘বিশ্বস্ত ও সর্বাঙ্গীন সংলাপ’ অব্যাহত থাকবে।

 

ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, ভারত তাকে আশ্বস্ত করেছে যে তারা রাশিয়া থেকে ছাড়মূল্যে অপরিশোধিত তেল কেনা বন্ধ করবে— রুশ তেল ক্রয়কে তিনি বারবার ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোর ‘সহায়তা’ হিসেবে সমালোচনা করেছেন।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘রুশ তেল ভারতের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’ 

এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি

ট্রাম্পের মন্তব্য এবং ভারতের সতর্ক প্রতিক্রিয়ার পর এই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অস্থির জ্বালানি বাজারে ভারতীয় ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা করা ভারতের সরকারের ধারাবাহিক অগ্রাধিকার, এবং আমরা সেই নীতিকে শ্রদ্ধা করি।’

 

রাশিয়া জানিয়েছে, ‘আমরা ভারতের সরকারি নীতিকে সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি, যা ভারতীয় জনগণ ও অর্থনীতির জাতীয় স্বার্থের প্রতিফলন। এই লক্ষ্য কোনোভাবেই রাশিয়া-ভারত সম্পর্কের পরিপন্থী নয়। আমরা তেল ও গ্যাস সহযোগিতা নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাব।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রাশিয়া ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের মধ্যে হস্তক্ষেপ করতে চায় না, তবে একই সঙ্গে দিল্লিকে পুরোনো বন্ধুত্বের কথাও মনে করিয়ে দেয়। ‘আমরা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে শ্রদ্ধা করি...ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার ঐতিহ্যগত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে,’ বলা হয় বিবৃতিতে।

তেল নিয়ে মস্কো-ওয়াশিংটন টানাপোড়েন

রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ভারতের তেল কেনা নিয়ে টানাপোড়েন ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই চলছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, বারবার ভারতকে রুশ তেল কেনা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যুদ্ধের অর্থ যোগাড় করতে তেল ছাড়ে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ করছে পশ্চিমা জোট।

ট্রাম্প, যিনি গত বছর দাবি করেছিলেন যে তিনি ‘একটি ফোন কলেই যুদ্ধ শেষ করতে পারবেন,’ রুশ তেল কেনা নিয়ে ভারতের সমালোচনায় সরব। তার প্রশাসন ভারতীয় রপ্তানির ওপর ২৫ শতাংশ ‘দণ্ডমূলক’ শুল্ক আরোপ করেছে।

ভারতের অবস্থান

অন্যদিকে, ভারত স্পষ্ট জানিয়েছে—জাতীয় নিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক স্বার্থে কোনো চাপের কাছে তারা নতি স্বীকার করবে না। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর ও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন উভয়েই বলেছেন, অর্থনৈতিকভাবে যুক্তিযুক্ত থাকা পর্যন্ত রুশ তেল কেনা অব্যাহত থাকবে।

জয়শঙ্কর পশ্চিমা দেশগুলোর দ্বিচারিতার দিকেও ইঙ্গিত করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, ইউরোপের অনেক দেশ এখনো রাশিয়া থেকে গ্যাস কিনছে।

এই প্রেক্ষাপটে চলতি সপ্তাহে ট্রাম্প বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে আশ্বস্ত করেছেন যে ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করবে। 

তার ভাষায়, ‘তিনি (মোদি) আমাকে বলেছেন, রাশিয়া থেকে আর তেল কেনা হবে না। (বুঝতে পারছি) এটা সঙ্গে সঙ্গে করা যায় না, কিন্তু প্রক্রিয়াটি খুব শিগগিরই শেষ হবে।’

ভারতের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়ায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও নাগরিকদের জন্য স্থিতিশীল জ্বালানি মূল্য নিশ্চিত করাই সরকারের প্রধান লক্ষ্য। ‘এটি বাস্তবায়নের জন্য আমরা জ্বালানি সরবরাহের উৎস বৈচিত্র্যময় করছি এবং বাজারের অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরিকল্পনা নিচ্ছি’।

উল্লেখযোগ্যভাবে, ওই বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে জ্বালানি আমদানি বাড়ানোর কথাও ইঙ্গিত করা হয়েছে। ‘বর্তমান মার্কিন প্রশাসন ভারতের সঙ্গে জ্বালানি সহযোগিতা গভীর করার আগ্রহ দেখিয়েছে, এবং আলোচনাগুলো চলমান,’ বলা হয়েছে বিবৃতিতে।