
গাজায় দুই বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের আপাতত ইতি টানা হয়েছে। তবে বাস্তবতা বলছে, শুরু হয়েছে নতুন আরেক অধ্যায়। হামাস সোমবার সকালে জীবিত সব জিম্মিকে ইসরায়েলের হাতে তুলে দিয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। এর বিনিময়ে ইসরায়েল ছেড়ে দিয়েছে বহু ফিলিস্তিনি বন্দিকে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত গাজা শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপের অংশ হিসেবে এই জিম্মি ও বন্দিবিনিময় করা হয়।
গত শুক্রবার দুপুরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে গাজায় বাড়ানো হয়েছে ত্রাণ সরবরাহ। এই প্রথম ধাপ সম্পন্ন হলে শুরু হবে পরবর্তী পর্যায়ের আলোচনা।
কে কে মুক্তি পেয়েছেন?
হামাস এখন পর্যন্ত ২০ জন জীবিত জিম্মিকে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির হাতে তুলে দিয়েছে। এদের মধ্যে আছেন ইসরায়েলি নাগরিক আইতান মোর, গালি বারম্যান, জিভ বারম্যানসহ আরও অনেকে।
তবে মৃত জিম্মিদের দেহ ফেরত নিয়ে দেখা দিয়েছে নতুন জটিলতা। চুক্তি অনুযায়ী, সোমবার দুপুরের মধ্যে সব মৃত জিম্মির দেহ ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও হামাস এখন পর্যন্ত মাত্র চারজনের দেহ হস্তান্তর করেছে। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, চুক্তি অনুযায়ী সবকিছু ফিরিয়ে আনতে হবে, যতক্ষণ না প্রত্যেকে দেশে ফেরে আমরা থামব না।
ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি
অন্যদিকে, জিম্মিদের বিনিময়ে ইসরায়েল ছেড়ে দিয়েছে ২৫০ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দি এবং গাজা থেকে আটক ১৭১৮ জনকে, যাদের মধ্যে ১৫ জন নাবালক।
তবে মারওয়ান বারঘুতি ও আহমাদ সা’দাতের মতো নেতারা এই তালিকায় নেই।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন পশ্চিম তীরে, ১৫ জন পূর্ব জেরুজালেমে এবং বাকিদের গাজা বা অন্যত্র পাঠানো হয়েছে।
পরবর্তীতে কি ঘটছে?
হামাসের হাতে থাকা জিম্মি মুক্তির পর ইসরায়েলি সেনারা গাজার ৫৩ শতাংশ এলাকা থেকে সরে গেছে।
একটি আন্তর্জাতিক শান্তি বাহিনী যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ করবে। এই বাহিনীতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে থাকবে প্রায় ২০০ সদস্য, যার মধ্যে মিশর, কাতার, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সেনারাও রয়েছেন।
ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনা অনুযায়ী, সব পক্ষ সম্মত হলে যুদ্ধ ‘তাৎক্ষণিকভাবে শেষ’ হবে। গাজা হবে নিরস্ত্র অঞ্চল, ধ্বংস করা হবে সব সামরিক অবকাঠামো।
প্রাথমিকভাবে গাজা পরিচালনা করবে ফিলিস্তিনি একটি অন্তর্বর্তী কমিটি। যা তত্ত্বাবধান করবে বোর্ড অব পিস নামে এক আন্তর্জাতিক পরিষদ। এর নেতৃত্বে থাকবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার।
পরবর্তীতে গাজার প্রশাসনিক ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) হাতে। তবে হামাসের কোনো সরাসরি বা পরোক্ষ ভূমিকা থাকবে না। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে রাজি হলে হামাস সদস্যদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে।
মূল বিতর্ক কোথায়?
শান্তি পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপগুলোতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে হামাসের নিরস্ত্রীকরণ ও ইসরায়েলের সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার।
হামাস এখনো জানায়নি তারা অস্ত্র ছাড়বে কিনা। বরং জানিয়েছে, একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত তাদের সংগ্রাম চলবে।
অন্যদিকে, ইসরায়েল পরিকল্পনার পূর্ণ সমর্থন দিলেও প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন।
চূড়ান্ত ধাপে ইসরায়েল গাজার মাত্র ১৫ শতাংশ এলাকাকে নিরাপত্তা বেষ্টনী হিসেবে ধরে রাখবে বলে পরিকল্পনায় বলা হয়েছে। তবে এর কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা দেওয়া হয়নি। যা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে হামাস ও ফিলিস্তিনি পক্ষের মধ্যে।
যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময়ের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের এই দীর্ঘ সংঘাত আপাতত বিরতির মুখে। তবে সামনে রাজনৈতিক সমঝোতা, নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ও গাজার পুনর্গঠন; সব মিলিয়ে পরিস্থিতি কতটা স্থায়ী শান্তিতে রূপ নেবে, তা এখনো অনিশ্চিত।
সূত্র: বিবিসি