Image description
 

ভারতের উত্তরপ্রদেশের বাগপত জেলায় এক ইমামের স্ত্রী ও দুই কন্যাশিশুকে ঘরের ভেতরে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। গতকাল শনিবার তাঁদের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

 

নিহতরা হলেন গাঙ্গনাউলি গ্রামের প্রধান মসজিদের ইমাম ইব্রাহিমের স্ত্রী ইশরানা (৩০) এবং তাঁদের দুই মেয়ে সোফিয়া (৫) ও সুমাইয়া (২)। মসজিদের প্রাঙ্গণে অবস্থিত ইমামের বাসভবনের ভেতরেই তাঁদের দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।

ঘটনার সময় ইমাম ইব্রাহিম কাজের জন্য দেওবন্দে ছিলেন। প্রতিদিনের পাঠের জন্য মসজিদে আসা শিশুদের মধ্যে কয়েকজন প্রথমে লাশগুলো দেখে চিৎকার শুরু করলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

 

খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ সুপার সুরজ কুমার রাই, অতিরিক্ত এসপি প্রবীণ কুমার চৌহান এবং সার্কেল অফিসার বিজয় কুমার ঘটনাস্থলে যান। লাশগুলো ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।

 

লাশ সরানোর সময় বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে দ্রুত বিচার দাবি করে। তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কঠোর পদক্ষেপের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ইমামের দুই ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের বয়স মাত্র ১৩ ও ১৬ বছর। পুলিশ সুপার সুরজ কুমার রাই জানান, “অভিযুক্ত কিশোররা মসজিদে ধর্মীয় শিক্ষা নিত এবং ইমামের শাস্তি ও বকাঝকার কারণে ক্ষুব্ধ ছিল। রাগের বশে তারা কয়েক দিন ধরে পরিকল্পনা করে এবং ইমাম বাইরে থাকাকালীন হামলা চালায়।”

তদন্তে জানা গেছে, তারা খুনের জন্য মসজিদের ভেতরে থাকা একটি ধারালো সরঞ্জাম ব্যবহার করে।

মিরাট রেঞ্জের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) কালানিধি নাইথানি ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বলেন, “আমরা পারিবারিক বিরোধ, ডাকাতি বা ব্যক্তিগত শত্রুতা—সব দিক বিবেচনায় রেখে তদন্ত করছি। পাঁচটি দল গঠন করা হয়েছে এবং অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হবে।”

পুলিশ জানায়, ইব্রাহিমের বাড়ি মূলত মুজাফ্ফরনগর জেলার সুন্না গ্রামে। গত চার বছর ধরে তিনি গাঙ্গনাউলি মসজিদে ইমামের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাঁর স্ত্রী ইশরানা মসজিদের প্রাঙ্গণে শিশুদের পড়ানোর জন্য এলাকায় পরিচিত ছিলেন।

এই হত্যাকাণ্ডে গোটা গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। স্থানীয় বাসিন্দারা পরিবারটিকে শান্তিপ্রিয় ও শ্রদ্ধেয় বলে বর্ণনা করেছেন। এক গ্রামবাসী বলেন, “তাঁরা খুব ভালো মানুষ ছিলেন, কখনও কারও সঙ্গে বিরোধে জড়াননি। এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড আমরা কল্পনাও করতে পারিনি।”

তদন্ত চলমান রয়েছে, এবং পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।