
গাজায় মানবিক সহায়তা কার্যক্রম শুরু হলেও বন্দি চিকিৎসকদের মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ইসরায়েল। যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় বহু ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হলেও শিশুবিশেষজ্ঞ ড. হুসাম আবু সাফিয়া এবং হাসপাতাল পরিচালক ড. মারওয়ান আল-হামস এখনো কারাবন্দি রয়েছেন।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে গাজার কামাল আদওয়ান হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে ড. সাফিয়াকে আটক করে ইসরায়েলি সেনারা। ওই সময় তিনি আহত ও অবরুদ্ধ রোগীদের পাশে থাকার চেষ্টা করলে সেনারা তাঁকে মারধর করে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি ইসরায়েলের berহিংস নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ইসরায়েল দাবি করেছে, সাফিয়া “সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন”, তবে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়নি। আইনজীবী ঘাইদ ঘানেম কাসেম জানিয়েছেন, তাঁকে ওফার কারাগারে আটক রাখা হয়েছে, যেখানে তাঁর শারীরিক অবস্থা ভয়াবহভাবে অবনতি হয়েছে। জুলাই মাসে মারধরের পর তিনি ৪০ কেজির বেশি ওজন হারিয়েছেন।
অন্যদিকে, রাফার আবু ইউসুফ আল-নাজ্জার হাসপাতালের পরিচালক মারওয়ান আল-হামসকেও ইসরায়েল মুক্তি দেয়নি। বেসামরিক পোশাক পরা ইসরায়েলি ছদ্মবেশী বাহিনী তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। প্যালেস্টিনিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস (পিসিএইচআর) জানায়, ২১ জুলাই রেড ক্রস ফিল্ড হাসপাতালের সামনে থেকে তাঁকে তুলে নেওয়া হয় এবং ঘটনাস্থলে দুই সাংবাদিককে গুলি করে হত্যা করা হয়।
পিসিএইচআর জানিয়েছে, আল-হামস ও নিহত সাংবাদিকরা গাজার হাসপাতালগুলিতে বোমা হামলার পর চিকিৎসকদের জীবন নিয়ে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করছিলেন। ইসরায়েল এখনো আল-হামসের অবস্থান সম্পর্কে কিছু জানায়নি।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, বর্তমানে ইসরায়েলি কারাগারে অন্তত ২৮ জন ফিলিস্তিনি চিকিৎসক আটক আছেন। তাঁদের মধ্যে আটজন সিনিয়র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, যাঁরা গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে তাঁদের অনেকে নির্যাতন, অনাহার ও একাকী কারাবাসের শিকার হয়েছেন।
ইসরায়েল ড. সাফিয়াকে “বেআইনি যোদ্ধা (Unlawful Combatant)” হিসেবে ঘোষণা করেছে, যার ফলে কোনো বিচার ছাড়াই অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাঁকে বন্দি রাখা সম্ভব হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এই আইন আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন, কারণ এতে আদালতের অনুমতি ছাড়াই মানুষকে অদৃশ্য করে রাখার সুযোগ তৈরি হয়।
মানবাধিকারকর্মীরা বলেছেন, চিকিৎসকদের আটক রাখা শুধু মানবতার প্রতি আঘাত নয়, বরং যুদ্ধবিরতির সময়ে মানবিক আস্থার পরিপন্থী পদক্ষেপ। তাঁরা অবিলম্বে ড. সাফিয়াসহ সব বন্দি চিকিৎসককে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তথ্যসূত্র: মিডল ইস্ট আই