
চীনের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর বড় ধাক্কা খেয়েছে ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজার। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এখন পর্যন্ত ১.৬ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবসায়ী ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারে ১৯ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
দ্য ইকোনোমিকস টাইমস জানিয়েছে, ট্রাম্পের ওই ঘোষণার পর গত ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে বাজারটি। পত্রিকাটি জানিয়েছে, এক ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজার মূল্য মাত্র ২৪ ঘণ্টার কম সময়ে ঝড়ের গতিতে কমেছে; যা এখন রেকর্ড।
কয়েনগ্লাসের ২৪ ঘণ্টার তথ্য উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ক্রিপ্টো ইতিহাসের সবচেয়ে বড় লিকুইডেশন ইভেন্ট’-এ ১৯ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ উধাও হয়ে গেছে; যা ১.৬ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবসায়ীকে প্রভাবিত করেছে। গত ১০ অক্টোবর এক ঘণ্টারও কম সময়ের ট্রেডিংয়ের মধ্যে ৭ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি পজিশন বিক্রি হয়ে গেছে।
কয়েনমার্কেটক্যাপের তথ্য দেখায়, ১১ অক্টোবর দুপুর ১২.৪২ মিনিটে বিটকয়েনের মান ৮.০৫% কমে ১,১১,৫৪২.৯১ ডলারে দাঁড়িয়েছে; যার বাজার মূলধন ২.২২ ট্রিলিয়ন ডলার এবং ট্রেডিং ভলিউম ১৮৩.৮৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ইথেরিয়াম ১১ শতাংশ পতনের পর প্রায় ৩,৮৭৮ ডলার এ ট্রেড করছিল। প্রধান অল্টকয়েন যেমন- এএক্সপি, ডজকয়েন, এবং কার্ডানো, ৩০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যহ্রাসে পড়ে; যা ব্যবসায়ীরা এক ধরনের লিভারেজড লিকুইডেশন বা ধার নিয়ে করা ট্রেডের ধস হিসাবে বর্ণনা করেছে।
কয়েনগ্লাসের তথ্য অনুযায়ী, মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ২০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি লিভারেজড পজিশন বন্ধ হয়ে গেছে; যা ক্রিপ্টো ট্রেডিং ইতিহাসে একদিনের মধ্যে সবচেয়ে বড় লিকুইডেশন ইভেন্ট। প্রায় ১.৬ মিলিয়ন ট্রেডারের পজিশন জোরপূর্বক বন্ধ হয়েছে, যার বেশিরভাগই বিটকয়েন ও ইথেরিয়ামে লং পজিশন ছিল।
বিজনেস অ্যাম ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ক্রিপ্টো বাজারের ব্র্যান্ড স্ট্রেংথ ইনডেক্সের সমতুল্য ওপেন ইন্টারেস্ট রাতারাতি প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গেছে। এটি সিস্টেম থেকে দ্রুত অনুমানমূলক লিভারেজ অপসারণের ইঙ্গিত।
আফ্রির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল পারেরা বলেন, ‘ব্যর্থতার পরিবর্তে একটি তরলতা-চালিত রিসেট ছিল এটি। বিক্রি যান্ত্রিক ছিল। ব্লকচেইনের মৌলিক বিষয়গুলির সঙ্গে এর খুব একটা সম্পর্ক ছিল না এবং ম্যাক্রো প্যানিকের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।’
ইনভেস্কোর ইটিএফ (ETF) প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্টের প্রধান ক্রিস মেলর বলেছেন, ‘এটি অযৌক্তিক আচরণ ছিল না। বিটকয়েন এখন উচ্চ-ব্যাটা ম্যাক্রো অ্যাসেটের মতো আচরণ করছে। এটি বৈশ্বিক বাণিজ্য নীতি, মুদ্রাস্ফীতি তথ্য এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংকেতের ওপর প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। এটি ক্রিপ্টোকারেন্সির পরিণতির লক্ষণ, অপূর্ণতার নয়।’
ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে গোটা বিশ্বে বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি করেছে। এর ফলে শুধু শেয়ার বাজার নয়, ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমে যাওয়ায় ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।