Image description

ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। তবে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও এর সহযোগী দলগুলো আবারও বলছে, এ উপত্যকার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা নিয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা ‘ফিলিস্তিনিদের নিজেদের বিষয়’।

ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ ও পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন (পিএফএলপি) গতকাল শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে সংগঠন দুটি গাজার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থার বিষয়ে হামাসের অবস্থানের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে। একই সঙ্গে বিবৃতিতে ফিলিস্তিনিদের দৃঢ়তার প্রশংসা করা হয়েছে।

সংগঠনগুলো বলছে, গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার ক্ষেত্রে ইসরায়েলের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যেকোনো বিদেশি শাসনের বিরুদ্ধে আমরা আবারও নিজেদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করছি। আমরা জোর দিয়ে বলছি, গাজা উপত্যকা ও এর প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রশাসন কেমন হবে, সেটা ফিলিস্তিনিদের নিজেদের বিষয়। এটা আমাদের জনগণ তাঁদের সম্মিলিত প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে সরাসরি নির্ধারণ করবেন।’

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, সেটা নিয়ে আলোচনা করার জন্য একটি ‘জরুরি জাতীয় বৈঠক’ আয়োজনে কাজ করার কথাও বিবৃতিতে জানিয়েছে সংগঠন দুটি।

এ বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এটি ফিলিস্তিনিদের অবস্থানকে ঐক্যবদ্ধ করবে। একটি বিস্তৃত জাতীয় কৌশল প্রণয়ন এবং অংশীদারত্ব, বিশ্বাসযোগ্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে আমাদের জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন করবে।’

তবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ওপর প্রভাব রাখা দল ফাতাহ এ বৈঠকের অংশ হতে রাজি হয়েছে কি না, সেটা স্পষ্ট নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার ভিত্তিতে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এতে ‘বোর্ড অব পিস’ নামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠনের বিষয়ে বলা আছে। এটি গাজার শাসন পরিচালনার জন্য ‘অন্তর্বর্তী টেকনোক্র্যাট কর্তৃপক্ষের’ তত্ত্বাবধান করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার ভিত্তিতে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এতে ‘বোর্ড অব পিস’ নামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠনের বিষয়ে বলা আছে। এটি গাজার শাসন পরিচালনার জন্য ‘অন্তর্বর্তী টেকনোক্র্যাট কর্তৃপক্ষের’ তত্ত্বাবধান করবে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে বোর্ড অব পিসের চেয়ারম্যান হবেন। এতে আরও থাকবেন যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারসহ অন্যরা।

হামাস ও ইসরায়েল যে যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে সম্মতি দিয়েছে, সেটা ট্রাম্পের পরিকল্পনা মেনেই হয়েছে। তবে গাজার ভবিষ্যতের শাসনভার কার হাতে যাবে, সেটা এখনো স্পষ্ট করা হয়নি।

স্যাটেলাইট থেকে তোলা গাজা নগরীর ধ্বংসযজ্ঞের ছবি। ১০ অক্টোবর ২০২৫
স্যাটেলাইট থেকে তোলা গাজা নগরীর ধ্বংসযজ্ঞের ছবি। ১০ অক্টোবর ২০২৫ছবি: এএফপি

যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্তের একটি অনুলিপি আল–জাজিরার হাতে এসেছে। এতে যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায় কার্যকর হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কোনো প্রকাশ্য উদ্‌যাপন কিংবা গণমাধ্যমের সামনে অনুষ্ঠান না করে অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দিতে হামাসকে আহ্বান জানানো হয়েছে।

যুদ্ধবিরতির শর্তে গাজা উপত্যকায় প্রতিদিন অন্তত ৬০০টি ত্রাণের ট্রাক প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার নিশ্চয়তার কথাও বলা আছে। সুপেয় পানির ব্যবস্থা নতুন করে চালু করা এবং ঘরবাড়ি হারানো গাজাবাসীর আশ্রয়ের জন্য শিবির স্থাপনের কথা বলা আছে।

ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স বিভাগ জানিয়েছে, গতকাল যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর তারা গাজা নগরীর রাস্তা থেকে ৬৩টি মরদেহ উদ্ধার করেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করতে না পারা এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাগুলোয় পৌঁছাতে অসুবিধার কারণে এখনো হাজারো ফিলিস্তিনি নিখোঁজ রয়েছেন।

ইসরায়েলি বাহিনী গাজার উত্তরাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকা থেকে সরে যেতে শুরু করার পর গতকাল হাজারো বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি নিজ নিজ ঘরবাড়িতে ফেরার যাত্রা শুরু করেছেন।

ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স বিভাগ জানিয়েছে, গতকাল যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর তারা গাজা নগরীর রাস্তা থেকে ৬৩টি মরদেহ উদ্ধার করেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করতে না পারা এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাগুলোয় পৌঁছাতে অসুবিধার কারণে এখনো হাজারো ফিলিস্তিনি নিখোঁজ রয়েছেন।

গাজা নগরীর ধ্বংসাবশেষের মধ্যে বাড়িঘরে ফিরছেন ফিলিস্তিনিরা। ১০ অক্টোবর ২০২৫
গাজা নগরীর ধ্বংসাবশেষের মধ্যে বাড়িঘরে ফিরছেন ফিলিস্তিনিরা। ১০ অক্টোবর ২০২৫ছবি: রয়টার্স

আল–জাজিরার সংবাদদাতা হানি মাহমুদ জানান, কয়েক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলের ব্যাপক বোমাবর্ষণে গাজা নগরীর প্রায় পুরোটাই ধ্বংষ হয়ে গেছে।

হানি মাহমুদ বলেন, ‘গাজা নগরীতে ফেরার পথে আমরা যখন উপকূলীয় সড়কের প্রধান প্রবেশপথের কাছে পৌঁছালাম, তখন ধ্বংসযজ্ঞ ও ভবনগুলোর ধ্বংসস্তূপের কারণে এটাকে অচেনা লাগছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘গাজা নগরী ছেড়ে আসার সময় আমরা আংশিক কিংবা পুরোটা টিকে আছে, এমন ১৫টি ভবনে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয় নিতে দেখেছিলাম। কিন্তু সেখানে ফেরার পথে সেগুলো আর দেখিনি।’

গতকাল দিনের শেষে গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর এ অঞ্চলের জন্য একটি ব্যাপক পুনর্গঠন পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।

যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম পর্যায়ে গাজা পুনর্গঠনের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ধ্বংসস্তূপ অপসারণের জন্য সরঞ্জাম পাঠানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। চুক্তিতে আরও বলা হয়েছে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তাপুষ্ট বিতর্কিত সংস্থা জিএইচএফকে এক পাশে রেখে জাতিসংঘের সংস্থা এবং অন্যান্য সহায়তা সংস্থা গাজায় মানবিক ত্রাণ বিতরণ করবে।

কিন্তু গতকাল জিএইচএফ ঘোষণা করেছে, যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও তারা গাজায় তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।