Image description
 

ইসরাইল ও হামাস গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায় বাস্তবায়নে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মাধ্যমে দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা রক্তক্ষয়ী এ যুদ্ধের অবসান হওয়ার একটি বাস্তব সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি সইকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন নেতারা। যুদ্ধে অবর্ণনীয় নৃশংসতার শিকার হয়েছেন ফিলিস্তিনিরা। তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছে পুরো বিশ্ব। অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়ে উঠেছে নিয়মিত ঘটনা। এছাড়া হামাসকে নির্মূলে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নও কার্যত অপূর্ণ রয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে।

 

বৃহস্পতিবার মিসরে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে চুক্তি হয়। ইসরাইল জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে। খবর বিবিসি আলজাজিরা, এনপিআর, ইন্ডিয়া টুডে ও জেরুজালেম পোস্টের।

 
 

গত সপ্তাহে ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান এবং উপত্যকাটিতে হামাসের হাতে থাকা ৪৮ জন জিম্মিকে (জীবিত ও মৃত) মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি রয়েছে। তাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত আছেন বলে মনে করা হচ্ছে। বিপরীতে ইসরাইলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের অনেককেই মুক্তি দেওয়া হবে।

দুই বছর পরে গাজা যুদ্ধ অবসানের এমন আশা থাকলেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিস্তারিতভাবে আলোচনা এখনো বাকি রয়েছে। যেমন গাজা কে পরিচালনা করবে এবং হামাসের ভবিষ্যৎ কী হবে সে পরিকল্পনা এখনো করা হয়নি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, ইসরাইল ও হামাস উভয়ই আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে সই করেছে। এর অর্থ হলো শিগগির সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং ইসরাইল নিজেদের সেনাদের নির্ধারিত একটি লাইনে সরিয়ে আনবে।

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই চুক্তিকে ‘ইসরাইলের জন্য একটি মহান দিন’ বলে অভিহিত করেছেন। এই চুক্তি অনুমোদনের জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার তার সরকার বৈঠক আহ্বান করে।

বৈঠক প্রসঙ্গে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখপাত্র শোশ বেদ্রোসিয়ান জানান, ইসরাইলি মন্ত্রিসভার বৈঠকে যদি প্রথম পর্যায়ের বিষয়গুলো নিয়ে নেতারা একমত পোষণ করেন তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হবে।

হামাসও এই চুক্তি সইয়ের কথা নিশ্চিত করেছে। একই সঙ্গে ট্রাম্প এবং এই চুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে তা পুরোপুরিভাবে মেনে চলতে ইসরাইলকে বাধ্য করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

যুদ্ধবিরতির চুক্তি সই হওয়ার খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে গাজাবাসীকে, ইসরাইলেও অনেকে আনন্দ প্রকাশ করেছেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পাল্টা জবাবে গাজায় ইসরাইল সামরিক অভিযান শুরু করার দুই বছর পর মিসরে এই সমঝোতার আলোচনা শুরু হয়।

হামাসের ওই হামলায় প্রায় এক হাজার ২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল।

হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেসময় থেকে গাজায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর অভিযানে অন্তত ৬৭ হাজার ১৮৩ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ২০ হাজার ১৭৯ জনই শিশু।

মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আসবে, আশাবাদী ট্রাম্প

যুদ্ধবিরতি চুক্তি সইয়ের পর ট্রাম্প ফক্স নিউজের শন হ্যানিটিকে বলেছেন, এখন মানুষের যত্ন নেওয়া হবে। এটা একটা ভিন্ন পৃথিবী হতে চলেছে। আমি মনে করি, সত্যিই মধ্যপ্রাচ্য একত্রিত বা সংঘবদ্ধ হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা বিশ্বাস করি গাজা অনেক নিরাপদ জায়গা হতে চলেছে এবং এটা এমন একটা জায়গা হতে চলেছে যেখানে পুনর্গঠন হবে।

ফক্স নিউজকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোও এই পুনর্গঠনে সাহায্য করবে। কারণ, তাদের কাছে প্রচুর সম্পদ রয়েছে এবং এটা যে ঘটছে তারা তা দেখতে চায়। ট্রাম্প বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আসবে, আমি খুবই আত্মবিশ্বাসী।

গাজাবাসীর উদযাপন

বেশ কিছু ভিডিওতে গাজাবাসীকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির খবরে উদযাপন করতে দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তির চুক্তির সংবাদ উদযাপনের বিভিন্ন ভিডিও প্রচারিত হচ্ছে।

ফিলিস্তিনি সাংবাদিক সাঈদ মোহাম্মদ ইনস্টাগ্রামে রাতের একটি ভিডিও ফুটেজ পোস্ট করেছেন। এতে দেখা গেছে, প্রধান শহর দেইর আল বালাহতে আল-আকসা হাসপাতালের বাইরে পুরুষ ও নারীদের ব্যাপক সমাগম দেখা গেছে। সংগীতের তালে তালে নেচে নেচে শিস এবং হাততালি দিতে দেখা যাচ্ছে তাদের। একই সঙ্গে আল্লাহু আকবার রব তুলতেও দেখা গেছে।

আরেকজন সাংবাদিক মোহাম্মদ আল-হাদ্দাদের আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, গাজার অন্য আরেকটি স্থানের রাস্তায় তরুণদের একটি ছোট দলকে নাচতে দেখা যাচ্ছে।

বিশ্বনেতাদের শুভেচ্ছা

জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যান্তোনিও গুতেরেস সব পক্ষকে এই চুক্তির সব শর্ত মেনে চলতে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই দুর্ভোগের অবসান হওয়া উচিত।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার বিবৃতিতে বলেন, গাজার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর সংবাদকে আমি স্বাগত জানাই। সারা বিশ্বের জন্য এটি গভীর স্বস্তির মুহূর্ত।

যুদ্ধবিরতির চুক্তি সইয়কে স্বাগত জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ বিবৃতিতে বলেন, দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে সংঘাত, জিম্মি এবং বেসামরিক মানুষের প্রাণহানির পর, চুক্তিটি শান্তির দিকে একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। আমরা সব পক্ষকে পরিকল্পনার শর্ত মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোয়ান চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি ট্রাম্পকে ‘প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রদর্শন করার’ জন্য ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে কাতার ও মিসরকেও মধ্যস্থতায় ভূমিকা রাখার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।

এরদোয়ান বলেন, দুই বছর ধরে বর্ণনাতীত কষ্ট সহ্য করা আমার ফিলিস্তিনি ভাইবোনদের প্রতি আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এ চুক্তিকে ‘জিম্মি ও তাদের পরিবার, গাজার ফিলিস্তিনি ও গোটা অঞ্চলের জন্য এক বড় আশার বার্তা’ বলে উল্লেখ করেছেন।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এক্সে লেখেন, এ চুক্তি গাজার জনগণের দুর্ভোগের অবসান ঘটানো এবং ন্যায়সংগত ও টেকসই শান্তির পথে অগ্রসর হওয়ার এক ঐতিহাসিক সুযোগ।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এই চুক্তিকে অসাধারণ খবর হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এই চুক্তি এবং ট্রাম্পের পরিকল্পনার নির্দেশিত বৃহত্তর পথ এই সংঘাত শেষ করার এক বিরল সুযোগ। এটি আমাদের কাজে লাগাতে হবে।