Image description

২০২৩ সালের নভেম্বরে ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তা ইয়োতাম ভিল্ক যখন গাজায় প্রবেশ করেন তখন ভিন্ন এক চিত্র দেখেন। যুদ্ধ যত এগোচ্ছিল, ততই তিনি মানুষের জীবনের মূল্য কমতে দেখেছেন বলে জানান। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন, প্রাথমিক শক্তি প্রয়োগ উভয় পক্ষকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু চিত্র ভিন্ন।

এদিকে গাজায় চালানো আগ্রাসনের জন্য অনুশোচনায় ভুগছেন ইসরায়েলি সেনারা। ইয়োতাম ভিল্ক ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানান, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাদের হাতে নিরস্ত্র এক ফিলিস্তিনি কিশোরকে হত্যার চিত্র মনে গেঁথে আছে তাঁর। এমন তথ্যই উঠে এসেছে এপির প্রতিবেদনে। 

ভিল্ক জানান, গাজায় ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত বাফার জোনে কোনো অননুমোদিত ব্যক্তি প্রবেশ করলে তাকে গুলি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

তিনি সেখানে অন্তত ১২ জনকে হত্যা করতে দেখেছেন। কিন্তু ওই কিশোরের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাকে তিনি ভুলতে পারছেন না।

২৮ বছর বয়সী ইয়োতাম ভিল্ক বলেন, ‘তার (ওই কিশোর) মারা যাওয়াটা ছিল একটি বৃহত্তর গল্পের অংশ। সেখানে থাকা এবং ফিলিস্তিনিদের ‘মানুষ হিসেবে না দেখার নীতির অংশ হিসেবে’ ওই কিশোর মারা গিয়েছিল।

ভিল্ক বলেন, গত আগস্টে যেদিন ওই ফিলিস্তিনি কিশোরকে হত্যা করা হয়, সেদিন ইসরায়েলি সেনারা তাকে থামতে বলে চিৎকার করে এবং তার পায়ে সতর্কতামূলক গুলি ছোড়ে। কিন্তু সে নড়াচড়া করতে থাকে। গাজার উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলকে বিভক্তকারী রাস্তা নেটজারিম করিডোর বাফার জোনে ঢোকার সময়ও অনেকে নিহত হয়েছেন। গাজায় ১৫ মাসের সংঘাতের বিরুদ্ধে কথা বলা এবং দায়িত্ব পালন করতে অস্বীকার করা ইসরায়েলি সেনাদের মধ্যে ভিল্ক একজন। 

এসব ইসরায়েলি সেনা বলছেন, তাঁরা এমন কিছু দেখেছেন বা করেছেন, যা নৈতিক সীমা অতিক্রম করেছে।

২৭ বছর বয়সী চিকিৎসক ইউভাল গ্রিন গত জানুয়ারিতে গাজায় প্রায় দুই মাস কাটানোর পর পদত্যাগ করেন। তিনি বলেন, সৈন্যরা বাড়িঘর অপবিত্র করেছে, মেডিকেল জরুরি অবস্থার জন্য তৈরি কালো মার্কার ব্যবহার করে গ্রাফিতি লিখেছে এবং বাড়িঘর লুট করেছে।

কয়েকজন সেনা এপিকে বলেছেন, গাজায় তারা যা দেখেছেন, তা হজম করতে কষ্ট হচ্ছে। অন্যরা এতটাই ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছিলেন যে, চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ইসরায়েলি সেনাদের কেউ কেউ বলেন, তারা অনুশোচনা বোধ করছেন। দ্বন্দ্বের মধ্যে আছেন, যা দেখেছেন, তা নিয়ে বন্ধুবান্ধব ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে নিজেদের শান্ত করার চেষ্টা করছেন।

ট্রমা থেরাপি বিশেষজ্ঞ টুলি ফ্লিন্ট বলেন, অনেক সেনাসদস্য তাঁদের ‘নৈতিক জায়গায় আঘাত’ পেয়েছেন। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শত শত সেনাসদস্য তাঁর কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছেন।

ফ্লিন্ট বলেন, মানুষ যখন তাদের বিশ্বাসের বাইরে গিয়ে কিছু করেন বা দেখেন, তখন এমন পরিস্থিতি হয়। এতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, বারবার সে দুঃসহ দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠতে পারে। 

সাবেক এক পদাতিক সেনা এপিকে বলেন, তিনি অপরাধবোধে ভুগছেন। ২০২৩ সালের শেষের দিকে প্রায় ১৫টি বাড়িঘর অযথা পুড়িয়ে দিতে দেখেছেন তিনি। সাবেক এই সেনা বলেন, আমি দেশলাই জ্বালাইনি, তবে আমি বাড়ির সামনে পাহারা দিয়েছিলাম। আমি যুদ্ধাপরাধে শামিল হয়ে গেলাম।

গাজায় ইসরায়েল ও হামাস গতকাল বুধবার একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে আগামী রবিবার থেকে। অবশ্য আগে থেকেই কিছু ইসরায়েলি সেনা যুদ্ধ বন্ধের জন্য তৎপরতা শুরু করেন। প্রায় ২০০ ইসরায়েলি সেনার সই করা এক চিঠিতে বলা হয়, সরকার যদি যুদ্ধবিরতিতে না পৌঁছায়, তবে তারা লড়াই করা বন্ধ করে দেবেন।

গাজায় যুদ্ধ অব্যাহত রাখতে অস্বীকৃতি জানানো সাত সেনা এপির সাথে কথা বলেছেন। কীভাবে ফিলিস্তিনিদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে এবং বাড়িঘর ধ্বংস করা হয়েছে, তা বর্ণনা করেছেন তারা। বেশ কয়েকজন বলেছেন, কোনো হুমকি না থাকলেও বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া বা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তাদের। তারা ইসরায়েলি অনেক সৈন্যকে বাড়িঘর লুট ও ভাঙচুর করতে দেখেছেন।