
নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও চাপ সত্ত্বেও ইরানের চবাহার বন্দর উন্নয়নে ভারত তার প্রতিশ্রুতি অটুট রেখেছে। এই বন্দর কেবল একটি বাণিজ্যিক স্থাপনা নয়, বরং ভারতের জন্য কৌশলগত ও ভূ-রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার।
পার্সটুডে'র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্ক 'নজর রিসার্চ ফাউন্ডেশন'-এর পশ্চিম এশিয়া বিশ্লেষক কবির তানিজা বলেন, “চবাহার বন্দর উন্নয়নে নয়াদিল্লির দৃঢ় অবস্থান মূলত ইরান ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের অংশ। এই বন্দর ভারতের জন্য কেবল বাণিজ্য নয়, কৌশলগত নিরাপত্তার দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি আরও বলেন, চবাহার উন্নয়ন শুধু বাণিজ্য নয়—ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা, মধ্য এশিয়ায় প্রভাব বিস্তার এবং চীন-পাকিস্তানের জোটের বিপরীতে কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষার জন্যও জরুরি।
আঞ্চলিক বিকল্প করিডোর: পাকিস্তানকে এড়িয়ে আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ নিশ্চিত করে চবাহার। ফলে ভারতকে একটি বিকল্প এবং নিরাপদ রুট প্রদান করে।
চীনা প্রভাবের জবাব: পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দরে চীনা বিনিয়োগের বিপরীতে চবাহার উন্নয়ন হচ্ছে ভারতের কৌশলগত পাল্টা পদক্ষেপ। এটি ভারত-ইরান যৌথ সহযোগিতার একটি প্রতীক হয়ে উঠছে।
অর্থনৈতিক সুবিধা: চবাহার বন্দর থেকে উত্তর-দক্ষিণ আন্তর্জাতিক পরিবহন করিডোর ব্যবহার করে ভারত ইউরোপগামী পণ্যের পরিবহন সময় ৪৫ দিন থেকে কমিয়ে আনতে পারবে ২৫ দিনে। এতে বাণিজ্য খরচ হ্রাস পাবে ও রপ্তানির গতি বাড়বে।
২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসন চবাহার প্রকল্পকে নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল। তবে ২০২৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে সেই ছাড় প্রত্যাহার করে নতুন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর প্রভাব পড়তে পারে।
ভারতের অবস্থান স্পষ্ট: ১০ বছরের চুক্তির আওতায় চবাহার বন্দর উন্নয়ন থেকে সরে আসা নয়। বরং নয়াদিল্লি এই প্রকল্পে অটল। বিশেষজ্ঞদের মতে, জেসিপিওএ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পর ভারতের তেল আমদানি কমাতে বাধ্য হওয়া এবং তার ফলে যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে, তা থেকে ভারত এখন শিক্ষা নিয়েছে এবং নিজস্ব স্বার্থেই কৌশল নির্ধারণ করছে।
ভারতীয় সংসদীয় প্রতিনিধি দল সম্প্রতি ইরানের সংসদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভারত চবাহার প্রকল্পে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। এই প্রকল্প ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং মধ্য এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
চবাহার বন্দর নিয়ে ভারতের অবস্থান শুধু অর্থনৈতিক নয়, এটি একটি ভূ-কৌশলগত রণকৌশলের অংশ। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বা বৈশ্বিক চাপ নয়, নয়াদিল্লি এখন নিজের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এবং চবাহার উন্নয়ন তারই একটি স্পষ্ট প্রমাণ।
শীর্ষনিউজ