Image description

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস। সেখানে আলোচিত সাংবাদিক মেহেদী হাসানের সঙ্গে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারের সংক্ষিপ্ত অংশ ঘিরে দেশ-বিদেশে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা। এ বিষয়ে বিশ্লেষণ করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান, যা তিনি উপস্থাপন করেছেন তার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে।

 

ডা. জাহেদের বক্তব্য অনুযায়ী, ডক্টর ইউনুসের সাম্প্রতিক মন্তব্যে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে—তিনি মনে করছেন, দেশের একটি বড় জনগোষ্ঠী চায়, তিনি ও তার অন্তর্বর্তী সরকার আরও পাঁচ, দশ, এমনকি পঞ্চাশ বছর ক্ষমতায় থাকুক। আর এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন ডা. জাহেদ: “কে এই জনগণ? কারা এ ধরনের কথা বলছে?”

 

মেহেদী হাসানের শো-তে দেওয়া সাক্ষাৎকারের প্রকাশিত অংশে দেখা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আপনি বলছেন মানুষ এখনই নির্বাচন চায়, কিন্তু মানুষ এটাও বলছে আমাদের আরও ৫ বছর, ১০ বছর, এমনকি ৫০ বছর থাকতে হবে।” তার দাবি, দেশের মানুষ এখন নির্বাচন নয়, আগে কাঠামোগত সংস্কার, বিচার এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন চায়।

 

ডক্টর ইউনুস আরও বলেন, “শুধু নির্বাচন করে কিছু হবে না। আগের মতোই দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার ফিরে আসবে, যদি কাঠামো না বদলায়।” তাই নির্বাচন নয়, ‘মূল সংস্কার’ আগে—এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন তিনি।

 

ডা. জাহেদ এই বক্তব্যকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেছেন এবং প্রশ্ন তুলেছেন—এই দীর্ঘ ক্ষমতায় থাকার ‘জনগণের দাবি’ আসলে কারা করছে? তার ভাষায়, “এমন বক্তব্য অতীতে দেখা গেছে, যখন নির্বাচনের দাবি হাইজ্যাক করে রাজনৈতিক দলবিরোধী সিভিল সোসাইটি শক্তি ক্ষমতার স্বপ্ন দেখেছিল। ২০০৭ সালের অভিজ্ঞতাই আমাদের সামনে স্পষ্ট উদাহরণ।”

 

তিনি আরও বলেন, “আজ সাধারণ মানুষ, ছোট ব্যবসায়ী, রিকশাচালক থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তরা, সবাই বোঝে—নির্বাচিত সরকার ছাড়া স্থায়ী সমাধান নেই। তাই নির্বাচন নিয়ে যে ধোঁয়াশা তৈরি করা হচ্ছে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং গণতান্ত্রিক চেতনাকে আঘাত করার নামান্তর।”

 

বিশ্লেষণে ডা. জাহেদ জনপ্রিয় আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের পুরনো একটি বক্তব্যও তুলে ধরেন। শহিদুল আলম এক আলোচনায় বলেছিলেন, “কোন সরকার থাকবে তা বড় কথা নয়, আমি চাই আমার অধিকার নিশ্চিত হোক।” এর মাধ্যমে ডা. জাহেদের ইঙ্গিত—ডক্টর ইউনুস ঘনিষ্ঠ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যেই গণতন্ত্র নয়, বরং ‘উন্নয়নমূলক কর্তৃত্ববাদ’-এর প্রতি একটি নরম মনোভাব গড়ে উঠেছে।

 

ডা. জাহেদ তার আলোচনায় বারবার নির্বাচনকে ‘আন্ডারমাইন’ করার প্রবণতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন। তার মতে, “গণতন্ত্র মানলে নির্বাচন মানতেই হবে। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, তার কার্যকারিতা খাটো করে দেখিয়ে অনির্বাচিত ব্যবস্থাকে গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টা অত্যন্ত বিপজ্জনক।”

 

তিনি বলেন, “যদি কেউ বলেন, নির্বাচন হলেও কিছু হবে না, তাহলে তো রাজনীতি, জনগণের মতামত, এবং গণতন্ত্র—সবকিছুকেই বাতিল করে দেওয়া হয়।”

 

ডা. জাহেদ স্পষ্ট করে বলেন, “বাংলাদেশকে চালাতে হলে রাজনৈতিক দলই লাগবে—ভালো হোক, খারাপ হোক। উন্নতি করতে চাইলে রাজনৈতিক দল দিয়েই করতে হবে। এর বাইরে কোনো 'সুশীল সরকার' দীর্ঘ মেয়াদে চলতে পারে না।”

 

তার মতে, ডক্টর ইউনুসের সাম্প্রতিক বক্তব্য ২০০৭ সালের সেই আলোচিত সময়ের স্মৃতি ফিরিয়ে আনছে—যখন রাজনীতিবিদদের অবমূল্যায়ন করে “সুশাসনের নামে” একটি অনির্বাচিত শক্তি ক্ষমতায় এসেছিল।