Image description
 

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান বলেছেন, ‘পাঁচ দেশের চেয়ে বিশ্ব বড়’—তুরস্কের এই দীর্ঘদিনের স্লোগান শুধু বর্তমান বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থার সমালোচনা নয়, বরং এটি মানবতার যৌথ ভবিষ্যতের এক দৃষ্টিভঙ্গি।

 

এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে টিআরটি ওয়ার্ল্ড।

তুরস্কের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান বুরহানেত্তিন দুরান জানিয়েছেন, সোমবার মার্কিন সাময়িকী নিউজউইক-এ প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে এরদোগান এই বক্তব্য রাখেন।

এরদোগান বলেন, বিশ্বজুড়ে সংঘাত, আইনহীনতা, সন্ত্রাসবাদ, মহামারি, জলবায়ু সংকট এবং ক্রমবর্ধমান বৈষম্য বর্তমান আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে প্রবল চাপে ফেলেছে। এ অবস্থায় তুরস্ক ন্যায়বিচার, শান্তি ও সংহতিকে ভিত্তি করে গড়া পররাষ্ট্রনীতির ধারাকে অক্ষুণ্ণ রেখে জটিল ও বেদনাদায়ক সংকট মোকাবিলায় কাজ করছে—নিজেদের নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি মানবতার যৌথ ভবিষ্যতকেও সুরক্ষিত করছে।

 

 

 

তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য গঠিত জাতিসংঘ বর্তমানে দুঃখজনকভাবে সেই মৌলিক দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ কার্যত মাত্র পাঁচ দেশের স্বার্থে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে।

এরদোগান বলেন, ‘এই অবিচারমূলক কাঠামোই বর্তমান সময়ের অচলাবস্থার অন্যতম প্রধান কারণ। জাতিসংঘকে অবশ্যই সংস্কার করতে হবে, যাতে তা বহুপাক্ষিকতার কার্যকর কেন্দ্র হিসেবে আবারও প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বৈশ্বিক সংকটে ন্যায্য সমাধান দিতে পারে।’

তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, কৃষ্ণ সাগর শস্য উদ্যোগ (ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ) তুরস্কের মধ্যস্থতার প্রতিশ্রুতির এক বাস্তব প্রমাণ, যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতায় সরাসরি অবদান রেখেছে। ককেশাস থেকে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য থেকে বলকান পর্যন্ত তুরস্ক ন্যায্য কূটনৈতিক সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে নিরন্তর দায়িত্ব পালন করছে।

 

 

 

গাজা প্রসঙ্গে

গাজায় ইসরাইলি দখল ও গণহত্যার ঘটনাকে এরদোয়ান মানবতার বিবেকের জন্য ‘সবচেয়ে গুরুতর পরীক্ষা’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এই পরীক্ষা পুরো মানবজাতির জন্য লজ্জাজনক। শিশু ও নারী নিহত হচ্ছে, লাখো মানুষ মৌলিক চাহিদা থেকেও বঞ্চিত।’

তিনি জানান, গাজায় ১ লাখ টনের বেশি মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে তুরস্ক। এর মাধ্যমে ‘অমানবিক অবরোধের মধ্যে ক্ষুধার্ত আমাদের ভাইবোনদের দুর্ভোগ লাঘবে’ চেষ্টা চলছে।

এরদোগান আহ্বান জানান, ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে দাঁড়াতে বৈশ্বিক সম্প্রদায়কে আরও ‘দৃঢ় ও আন্তরিক অবস্থান’ নিতে হবে।

তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন, ন্যায়সঙ্গত শান্তি আসতে পারে কেবল ১৯৬৭ সালের সীমানার ওপর ভিত্তি করে পূর্ব জেরুসালেমকে রাজধানী করে পূর্ণ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। তিনি বলেন, ‘‘ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়াই দমন, দখল ও অবরোধের বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী জবাব।’’

সিরিয়া প্রসঙ্গে

সিরিয়ার পুনর্গঠন মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত জরুরি বলে উল্লেখ করেন এরদোগান। তিনি বলেন, ‘সিরিয়ার ভবিষ্যত নিয়ে যেকোনো সিদ্ধান্তে সিরিয়ান জনগণের স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা আসতে পারে কেবল সব সম্প্রদায়ের যৌথ ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে।’

 

 

 

তুরস্ক বারবার সিরিয়ার ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও রাজনৈতিক ঐক্যের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। এরদোগান বলেন, ‘সিরিয়ার জনগণের ইচ্ছাকে উপেক্ষা করে কিংবা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে প্রশ্রয় দিয়ে কোনো সমাধান আসতে পারে না।’

তিনি জোর দিয়ে বলেন, দীর্ঘ ১৪ বছরের সংকট থেকে মুক্তি পেতে সিরিয়াকে একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্র কাঠামো ও সামাজিক শৃঙ্খলা গড়ে তুলতে হবে, যা যৌথ দায়িত্ব ও সহযোগিতামূলক নিরাপত্তার ভিত্তিতে দাঁড়াবে।

শেষে এরদোগান বলেন, তুরস্ক তার ‘কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতা’ থেকে শিক্ষা নিয়ে মানবতাকে ন্যায়বিচার ও মর্যাদাপূর্ণ ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।