Image description

গাজা যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েলের কাছ থেকে অস্ত্র কেনার বড় চুক্তি বাতিল করেছে স্পেন সরকার।

আজ মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি ও টাইমস অব ইসরায়েল।

চুক্তি অনুসারে, প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ইউরো বা ৮২৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যমানের ইসরায়েলি রকেট লঞ্চার কেনার কথা ছিল মাদ্রিদের। তবে তা বাতিল করেছে স্পেন।

গত সোমবার এ সংক্রান্ত নথি সংগ্রহ করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

এর আগে গত সপ্তাহে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ঘোষণা দেন যে, তার সরকার ইসরায়েলের কাছ থেকে সামরিক উপকরণ কেনা বা দেশটির কাছে বিক্রি বন্ধে আইন তৈরি করবে। গাজায় ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক আগ্রাসনের জেরে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।

২০২৩ সালের অক্টোবরে একাধিক স্প্যানিশ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইসরায়েলি অস্ত্র নির্মাতা এলবিট সিস্টেমের চুক্তি হয়।

চুক্তির আওতায় ১২টি সিলাম রকেট লঞ্চার কেনার কথা ছিল স্পেনের। ওই রকেট লঞ্চারগুলো এলবিটের 'পালস' প্ল্যাটফর্মের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছিল।

এসব তথ্য জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ মিলিটারি ব্যালেন্স।


১২টি ইসরায়েলি রকেট লঞ্চারের অর্ডার বাতিল করেছে স্পেন। ছবি: এএফপি

সিলাম লঞ্চ সিস্টেম ব্যবহার করে বেশ কয়েক ধরনের রকেট হামলা চালানো যায়। এসব রকেটের সর্বোচ্চ পাল্লা ৩০০ কিলোমিটার (প্রায় ১৮৬ মাইল)।

স্পেনের গ্লোবস আউটলেট জানিয়েছে, ওই চুক্তি থেকে এলবিটের ১৭৬ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার পাওয়ার কথা ছিল।

গত ৯ সেপ্টেম্বর স্পেনের সরকারি চুক্তিবিষয়ক প্ল্যাটফর্মে চুক্তি বাতিলের তথ্য প্রকাশ করা হয়। ইসরায়েল ও স্পেনের গণমাধ্যমে সংবাদটি সবার আগে প্রচারিত হয়।

গাজায় গণহত্যা বন্ধে সোচ্চার স্পেন

একদিন আগেই স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী সানচেজ গাজার গণহত্যা বন্ধে নানা উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে বক্তব্য দেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের জেরে দেশটির কাছ থেকে অস্ত্র কেনা ও তাদেরকে অস্ত্র বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সানচেজের বামপন্থি সরকার। পার্লামেন্টের অনুমোদনের পর এ বিষয়ে আইন পাস করা হবে।

মূলত, গাজায় সামরিক অভিযান তীব্র করার পর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নিয়েছে স্পেন।

পাশাপাশি, ইসরায়েলের অপর এক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১৬৮টি ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার কেনার ক্রয় চুক্তিও বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে স্পেন।


 

ওই চুক্তির মূল্যমান ৩৩৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার। এ বিষয়টি গত জুনে গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়।

ইসরায়েলি প্রভাব মুক্ত স্পেন গড়ার অঙ্গীকার

স্পেনের সংবাদমাধ্যম লা ভ্যানগার্ডিয়া জানিয়েছে, ধীরে ধীরে স্পেনের সশস্ত্র বাহিনীকে 'ইসরায়েলি অস্ত্র ও প্রযুক্তি' থেকে বের করে আনার বৃহত্তর প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।

সরকারি দরপত্রের তথ্য পর্যালোচনা করে বার্সেলোনাভিত্তিক নিরাপত্তা-গবেষণা প্রতিষ্ঠান দেলাস সেন্টার এ ধরনের উদ্যোগে ইসরায়েলের সম্ভাব্য আর্থিক ক্ষতির পূর্বাভাস দেয়।

প্রতিষ্ঠানটির ভাষ্য, গাজায় আগ্রাসন শুরুর পর থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যমানের ৪৬টি সামরিক চুক্তি করেছে স্পেন।

 

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের হামলায় এক হাজার ২০০ জন নিহত। এ ছাড়াও, ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। সেদিনই পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল, যা আজও অব্যাহত আছে। এই নির্বিচার হামলায় প্রায় ৬৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই শিশু ও নারী।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর 'গাজা নীতির' বড় সমালোচকদের একজন সানচেজ। ইউরোপের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে তিনিই প্রথম গাজার ধ্বংসযজ্ঞকে সরাসরি 'গণহত্যা' আখ্যা দেন।

মাদ্রিদ-তেল আবিবের সম্পর্ক সাপে-নেউলে

কোনো ধরনের ছলচাতুরী না করে প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একের পর এক শাস্তিমূলক উদ্যোগ নিচ্ছেন। এর প্রতিফলন পড়ছে দুই দেশের সম্পর্কে। বিশ্লেষকদের মত, সাপ-বেজির মতোই বৈরী সম্পর্ক এখন দুই দেশের।

২০২৪ সালে ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় স্পেন। সে সময় রাগান্বিত নেতানিয়াহু মাদ্রিদ থেকে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নেন। এরপর আর ওই দেশে কোনো ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত নিয়োগ পাননি।

গত সপ্তাহে সানচেজের নতুন উদ্যোগের পর আবারও ইসরায়েলের সঙ্গে উত্তপ্ত বাদানুবাদ হয় স্পেনের। ওই ঘটনার জেরে স্পেনও ইসরায়েল থেকে তাদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

 

ক্রীড়া জগতেও ইসরায়েল-স্পেনের রেষারেষির ছাপ

ক্রীড়া জগতেও ছড়িয়ে পড়েছে দুই দেশের বৈরী সম্পর্ক।

ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলপন্থি বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘাত দেখা দিলে বিলবাও শহরে আন্তর্জাতিক সাইকেল রেসে কাটছাঁট করা হয়। বিক্ষোভকারীদের দাবি ছিল, ইসরায়েলি প্রিমিয়ার টেক দলকে প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দিতে হবে।

গত সপ্তাহে স্প্যানিশ দাবা টুর্নামেন্ট থেকে সাত ইসরায়েলি নাম প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন। আয়োজকরা তাদেরকে জানান, যেহেতু স্পেনবাসী গাজার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে, তাই তারা আর ওই প্রতিযোগিতায় ইসরায়েলি পতাকা নিয়ে আসতে পারবেন না। এ কথা শুনে দাবাড়ুরা প্রতিযোগিতা বর্জন করেন।