একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর দলের ভেতরেই প্রবল চাপে পড়েন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক। একপর্যায়ে বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান নেতা কেমি ব্যাডেনোচ তাকে বরখাস্তের আহ্বান জানান। কিন্তু কিয়ার স্টারমারের নীরবতা এবং প্রথম দিকে টিউলিপের পক্ষাবলম্বন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকেও চাপে ফেলে।
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনের ফলে পরিস্থিতি লেবার পার্টির ইমেজ রক্ষার দিকে গড়াতে থাকে। মন্ত্রিত্ব থেকে যে বরখাস্ত করা হতে পারে তা টিউলিপও ইঙ্গিত পেয়েছিলেন।
দ্য গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণ বলছে, কিয়ার স্টারমার সরকার গঠন করার পর থেকেই প্রশাসনিক নীতিনির্ধারণে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার বেশ কঠোর বলেই পরিচিত। খুব সাধারণ কারণেও কর্মকর্তাদের বরখাস্ত বা পদত্যাগে বাধ্য করেছেন তিনি।
অপর এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ জানায়, কিয়ার স্টারমার এবং টিউলিপের মধ্যে দীর্ঘ বন্ধুত্ব রয়েছে। এই জুটির রাজনৈতিক বন্ধন ২০১৪ সাল থেকে শুরু হয়। তখন টিউলিপ ইতোমধ্যেই হ্যাম্পস্টেড এবং কিলবার্নে লেবারের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। অপরদিকে প্রতিবেশী হলবর্ন এবং সেন্ট প্যানক্রাসে বিজয়ের জন্য লড়ছিলেন স্যার কিয়ার। টিউলিপ সে সময় কিয়ারের পাশে দাঁড়ান। ২০১৫ সালের নির্বাচনে একই রাতে তারা একসঙ্গে পার্লামেন্টে প্রবেশ করেন। এ ছাড়া সর্বশেষ নির্বাচনে কিয়ারের পক্ষে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রচার চালিয়েছিলেন।
দ্য গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণ বলছে, তাই সরকারের কেউ কেউ জিজ্ঞাসা করছেন- দুর্নীতি দমন মন্ত্রী হিসেবে টিউলিপ সিদ্দিকের অবস্থান অযোগ্য বলে স্পষ্ট হয়ে গেলেও প্রধানমন্ত্রী কী এত দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছিলেন? যার মাধ্যমে তিনি তার বিরুদ্ধে বিতর্ক থামিয়ে দিতে পেরেছিলেন? ১০ নম্বর ডাউন স্ট্রিটের সূত্র জানিয়েছে, ম্যাগনাসের তদন্তের ফলাফলে অনিবার্য দুর্নীতি প্রমাণিত হলেও স্টারমার নিয়ম অনুযায়ী টিউলিপকে সরাতে চেয়েছিলেন।
সূত্রের একজন বলেন, আমরা সব সময় জানতাম, এটি কীভাবে শেষ হবে। কিন্তু কিয়ার মনে করেছিলেন, সরকারি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়াই সঠিক। কিছু প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টিউলিপের সম্পর্ক উঠে এসেছে। সেসব অনুযায়ী তারা ঘনিষ্ঠ বন্ধু না হলেও, টিউলিপ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক স্থাপন করেছেন।
পরিস্থিতি বলছে, কিয়ার স্টারমার টিউলিপকে সম্মান দিয়েছেন। টিউলিপ নিজেই বুঝতে পারছিলেন তাকে কী করতে হবে। সময়মতো পদত্যাগের ঘোষণা তাই প্রমাণ করে। অপরদিকে সরকার তাকে মান উপদেষ্টার কাছে নিজেকে তদন্তের জন্য সমর্পণের কথা উল্লেখ করে কৃতিত্ব দিয়েছে। যদিও গার্ডিয়ান বুঝতে পারছে যে, টিউলিপকে সরানোই ছিল বাস্তব।