
নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিবাদে টানা দুই দিনের ভয়াবহ বিক্ষোভে অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৬০০ জনেরও বেশি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী রাস্তায় নামলেও, অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) হিমালয়ান টাইমস-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকার পতনের পর রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন এলাকায় সেনা মোতায়েন করা হয়। শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে, নাগরিকদের ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে সেনাবাহিনী।
বিক্ষোভকারীরা সরকারি ভবনে আগুন দেওয়ায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করে কর্তৃপক্ষ। তবে কেবল নিরাপত্তা নয়, অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব নিয়েও আলোচনায় নামতে হয়েছে সেনাপ্রধানদের।
সেনা সদর দপ্তরে বিক্ষোভকারীদের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক করেছে। তারা সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে প্রস্তাব করেছে। ২০১৬-২০১৭ সাল পর্যন্ত দায়িত্বে থাকা সুশীলা কার্কি নেপালের ইতিহাসে একমাত্র নারী প্রধান বিচারপতি এবং তখন থেকেই তিনি জনপ্রিয়। যদিও তার প্রার্থিতার বিরোধিতা করছেন আন্দোলনকারীদের একাংশ।
এর আগে সোমবার ফেসবুক, এক্স (সাবেক টুইটার), ও ইউটিউবসহ বেশ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকার সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেয়। এর প্রতিবাদেই রাজপথে নামে হাজারো তরুণ-তরুণী। মঙ্গলবার পুলিশ গুলি চালালে আন্দোলন ভয়াবহ রূপ নেয়। ওই দিন রাতেই প্রধানমন্ত্রী খড়গ প্রসাদ শর্মা ওলি পদত্যাগ করেন। তবে তিনি সরকারি বাসভবন ছেড়ে কোথায় গেছেন—তা এখনও জানা যায়নি।
প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পৌডেল ওলিকে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিতে বললেও, ওলি সাড়া না দেওয়ায় দেশজুড়ে তৈরি হয়েছে নেতৃত্ব সংকট। আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে রেহান রাজ দঙ্গল জানান, তারা সেনা কর্তৃপক্ষকে সুশীলা কার্কির নাম প্রস্তাব করেছেন।
এদিকে সহিংসতা থামাতে সেনাবাহিনী শুধু রাজপথেই নয়, কারাগারেও হস্তক্ষেপ করেছে। মঙ্গলবার কাঠমান্ডুর প্রধান কারাগারে কয়েদিরা পালানোর চেষ্টা করলে সেনাবাহিনী গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে হতাহতের খবর না থাকলেও, ঘটনাটি আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
বিক্ষোভকে ‘জেনারেশন জি’র আন্দোলন’ বলে অভিহিত করা হচ্ছে। মূলত তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দীর্ঘদিনের বেকারত্ব, রাজনৈতিক দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ এই আন্দোলনে রূপ নিয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে নেপালে তরুণদের বেকারত্বের হার ছিল প্রায় ২০ শতাংশ। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিদিন দুই হাজারেরও বেশি যুবক কর্মসংস্থানের সন্ধানে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন।
মঙ্গলবার সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও, বিক্ষোভ থামেনি। কারণ, পুলিশের গুলিতে অন্তত ১৯ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ তীব্র হয়ে ওঠে।
সেনাবাহিনী এখন শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে টহল দিচ্ছে, গাড়ি ও ব্যক্তিদের তল্লাশি করছে। তবে জনসাধারণের উদ্বেগের কেন্দ্রে রয়েছে—কে হবেন অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে?
দেশজুড়ে এখন একটাই প্রশ্ন—শান্তি ফিরবে কবে, কিভাবে?
শীর্ষনিউজ/