
মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি আবারও বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে প্রভাব ফেলেছে। কাতারে ইসরায়েলি হামলা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন অর্থনৈতিক চাপের আহ্বান আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামে ঊর্ধ্বগতি তৈরি করেছে। তবে দুর্বল চাহিদা ও বাজারের সাধারণ মনোভাবের কারণে এই ঊর্ধ্বগতি সীমিত পর্যায়ে থেকে যায়।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) বৈশ্বিক বাজারে তেলের দামের এ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। মূলত কাতারে ইসরায়েলি হামলার কারণে সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয় এবং তার সঙ্গে ট্রাম্পের রাশিয়ান তেল ক্রেতাদের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের আহ্বান মিলিয়ে বাজারে চাপ সৃষ্টি হয়। এর ফলেই বিশ্ববাজারে দামের ওঠানামা শুরু হয়।
এদিন ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬১ সেন্ট বা ০.৯২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭ ডলার। একই সময়ে মার্কিন ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুড তেলের দাম ৬১ সেন্ট বা ০.৯৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৬৩.২৪ ডলারে। ওএএনডিএ-এর সিনিয়র বাজার বিশ্লেষক কেলভিন ওং জানান, কাতারে ইসরায়েলের নজিরবিহীন হামলার কারণে তেল স্থাপনাগুলো ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ওপেকপ্লাস সদস্য দেশগুলোর স্থাপনায় আক্রমণ হলে তা স্বল্পমেয়াদে বড় ধরনের সরবরাহ সংকট ডেকে আনতে পারে।
ইসরায়েল দাবি করেছে, কাতারে তারা হামাস নেতৃত্বকে লক্ষ্য করে এ হামলা চালিয়েছে। তবে কাতারের প্রধানমন্ত্রী এটিকে শান্তি আলোচনার জন্য একটি বড় হুমকি বলে উল্লেখ করেছেন। হামলার পরপরই বাজারে তেলের দাম প্রায় ২ শতাংশ বেড়ে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র দোহাকে আশ্বস্ত করে যে এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না এবং সরবরাহে কোনো তাৎক্ষণিক বিঘ্ন ঘটেনি। এর ফলে দাম কিছুটা স্থিতিশীল হয়ে পড়ে।
একই সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আহ্বান জানিয়েছেন চীন ও ভারতের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের জন্য। তার উদ্দেশ্য হলো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর আরও অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা। চীন ও ভারত রাশিয়ার প্রধান তেল ক্রেতা হওয়ায় তারা রুশ অর্থনীতিকে সচল রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এই দুই দেশ রাশিয়া থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছে।
এলএসইজি-এর বিশ্লেষকদের মতে, চীন বা ভারতের মতো বড় ক্রেতাদের ওপর যদি শুল্ক আরোপ করা হয়, তবে তা রুশ তেলের রপ্তানি বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এতে বৈশ্বিক সরবরাহ সংকুচিত হবে এবং তেলের দামে নতুন করে ঊর্ধ্বগতি দেখা দিতে পারে।