
শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের পর এবার নেপালে তরুণদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানে পতন হলো প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির সরকারের। বিক্ষোভকারীরা মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেলের বাসভবনে ঢুকে তাণ্ডব চালায়। এদিন অধিকাংশ মন্ত্রীর বাড়িতেও হামলা হয়। এমন পরিস্থিতিতে দেশটির সেনাপ্রধান প্রধানমন্ত্রী ওলিকে পদত্যাগের পরামর্শ দেন। এরপরই পদত্যাগ করেন ওলি।
নেপালের একাধিক সংবাদমাধ্যম দাবি করছে, তরুণদের এই নবজাগরণের নেপথ্যে রয়েছেন ছত্রিশ বছর বয়সী এক তরুণ নেতা সুদান গুরুং। ২০১৫ সালে নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়। সেই সময় নিজের সন্তানকে হারান সুদান। এরপরই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘হামি নেপাল’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এই সংগঠনের মাধ্যমে প্রান্তিক নেপালের জন্য কাজ শুরু করেন তিনি। মূলত ছাত্র-যুবদের দ্বারা পরিচালিত হয় এই সংগঠন। ২০১৫ সালের পর ত্রাণ ও বিপর্যয় মোকাবিলার কাজে নিজেকে যুক্ত করেন সুদান। ধীরে ধীরে নেপালের ছাত্র-যুবদের কাছে হয়ে ওঠেন জনপ্রিয় মুখ। পরবর্তীতে বিপি কৈরালা ইনস্টিটিউটে দুর্নীতির প্রতিবাদ করেন সুদান।
নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের পেছনে কাজ করেছে সুপরিকল্পিত ও ধাপে ধাপে সংগঠিত এক আন্দোলন। আন্দোলন সংগঠকের ভূমিকায় ছিলেন সুদান। তার গৃহীত চার কৌশলী পদক্ষেপই আন্দোলনকে সাফল্যের দিকে নিয়ে যায়।
প্রথম ধাপে ডিজিটাল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়। নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও বিকল্প মেসেজিং অ্যাপ, ভিপিএন এবং সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যমে বার্তা ছড়ানো হয়। হামি দলের স্বেচ্ছাসেবীরা রাতজুড়ে ফোন কল, হ্যান্ডবিল ও পোস্টারের মাধ্যমে বিক্ষোভের বিস্তারিত তথ্য জানান।
দ্বিতীয় ধাপে প্রতীকী প্রতিবাদের কৌশল নেওয়া হয়। তরুণদের স্কুল ইউনিফর্ম পরে বই হাতে রাস্তায় নামতে বলা হয়। এই চিত্র আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ভাইরাল হয়, যা বিশ্বজনমত তৈরিতে সাহায্য করে।
তৃতীয় ধাপে ক্ষেত্র পর্যায়ে সমন্বয় করা হয়। প্রতিটি শহরে স্থানীয় সমন্বয়ক নিয়োগ দেয়া হয়। তারা ভিড় নিয়ন্ত্রণ, মিডিয়া যোগাযোগ এবং পুলিশি বাধা মোকাবিলার দায়িত্বে থাকেন। আহতদের দ্রুত সেবা দিতে চিকিৎসা ব্যবস্থাও রাখা হয় আন্দোলনের অংশ হিসেবে।
চতুর্থ ধাপে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পুনরায় চালুর দাবির পাশাপাশি সরাসরি সরকারের পদত্যাগ দাবি করা হয়। এই সংগঠিত আন্দোলন দুই দিনের মাথায় সরকারকে চাপে ফেলে। রাজধানী থেকে প্রদেশ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ, আন্তর্জাতিক চাপ ও জনসমর্থনের মুখে প্রধানমন্ত্রী ওলি পদত্যাগে বাধ্য হন।
সরকার পতনের পর সুদান গুরুং আন্দোলনকারীদের শান্ত থাকতে, সহিংসতা এড়াতে এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের জন্য কাজ চালিয়ে যেতে বলেন। তার মতে, এটি নেপালের জন্য এক নতুন সূচনা, যা দেশকে দুর্নীতি ও অকার্যকর সরকারব্যবস্থা থেকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক শাসনের দিকে নিয়ে যাবে।