
আকাশ কাঁপিয়ে দিচ্ছে যুদ্ধবিমান আর মাটিতে গর্জে উঠছে ইরানি কামান। মধ্যপ্রাচ্যের বুকে ছড়িয়ে পড়ছে যুদ্ধের বজ্রধ্বনি, যেন পুরো মধ্যপ্রাচ্য দাঁড়িয়ে আছে এক অনিবার্য বিস্ফোরণের দ্বারপ্রান্তে। ১২ দিনের সেই তীব্র যুদ্ধে যখন ইসরায়েল ভেবেছিল ইরানকে হাঁটু গেড়ে বসাতে পারবে, তখনই পাল্টে গেল খেলার দৃশ্যপট। ন্যাটো আর পশ্চিমা অস্ত্রশক্তির পূর্ণ সহায়তা নিয়েও ব্যর্থ হলো নেতানিয়াহু সরকার। সবচেয়ে বড় কথা হলো, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা পূর্ণরূপে ধ্বংস হওয়ার যে ভ্রান্ত দাবিতে পশ্চিমা জোট ব্যস্ত ছিল, সেটাকে উড়িয়ে দিয়ে ইরান জানাল তাদের পারমাণবিক শক্তি এখনো অক্ষত রয়েছে।
শুধু তাই নয়, পরবর্তী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরানের সেনাবাহিনী। এমনটাই জানালেন ইরানের সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল আমির হাতেমী। কমান্ডার হাতেমী আরও স্পষ্ট করে জানালেন, যুদ্ধ শুধু আকাশে বা মাটিতে হয়নি। টার্গেট ছিল ইরানের প্রাণভোমরা, অর্থাৎ পারমাণবিক কর্মসূচি। কিন্তু শত্রুপক্ষ যতবার আঘাত হেনেছে, ততবারই ভেঙে পড়েছে ইসরায়েলের নিজস্ব পরিকল্পনা।
সম্প্রতি ইসফাহান, তাবরিজ আর হামাদান ঘুরে সেনা ইউনিট পরিদর্শন করলেন হাতেমী। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ইরানি সেনাদের উদ্দেশ্যে তিনি জানান, এই প্রতিরোধের পেছনে শুধু সেনাবাহিনী নয়, ছিল দেশের প্রতিটি মানুষ। সেনাবাহিনীর স্থলবাহিনী, বিমান প্রতিরক্ষা, রেভলুশনারি গার্ড, বাসিজ থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক—সবাই মিলে গড়ে তুলেছিল এক অদম্য ঢাল। ইসরায়েল আর তার মিত্ররা চেষ্টা করেছিল ইরানের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ধ্বংস করতে। পরিকল্পনা ছিল সমন্বিত, আঘাত ছিল বহুমুখী, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইরানের প্রতিরক্ষা জাল ভেদ করতে পারেনি তারা। বরং এই যুদ্ধ প্রমাণ করেছে ইরানের সিস্টেম শুধু টিকে নেই, বরং কার্যকারিতায় দেখিয়েছে এক নতুন মাইলফলক।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই পুরো লড়াইয়ের কেন্দ্র ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি। হাতেমীর ভাষায়, এই কর্মসূচি কোনো আমদানি করা প্রযুক্তি নয়, বরং এটা ইরানের মাটির গভীরে গঠিত এক নিজস্ব সক্ষমতা। তাই বোমা বা রকেট দিয়ে এটাকে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। কূটনীতিকরা বলছেন, হাতেমীর এই বক্তব্য শুধু সামরিক শক্তি প্রদর্শন নয়, বরং আন্তর্জাতিক মহলে এক স্পষ্ট বার্তা আর তা হলো ইরান তার পারমাণবিক অধিকার থেকে এক চুলও সরে আসবে না।
এছাড়াও ইরানি কমান্ডারের কথায় বারবার উঠে এসেছে আরেকটি দিক, আর তা হলো জনগণের অভূতপূর্ব সংহতি। যুদ্ধের দিনে রাস্তায় সাধারণ মানুষও দাঁড়িয়েছে সেনাদের পাশে। হাতেমীর মতে, এই ঐক্যই আজ ইরানকে দিয়েছে এক অদম্য শক্তি, যেটা শুধু ইসরায়েল নয় বরং পুরো পশ্চিমা জোটের জন্য এক বড় সতর্কবার্তা। মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে তাই এখন একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। আর তা হলো, পরবর্তী রাউন্ডে যখন সংঘর্ষ শুরু হবে, তখন ইরানের এই ঐক্যবদ্ধ প্রতিরক্ষা বলয় ভেদ করতে আসলেই কি সক্ষম হবে ইসরায়েল ও তার পশ্চিমা মিত্ররা? নাকি আবারও ইতিহাস লিখবে ইরানের অদম্য শক্তি?