Image description

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানি বাড়তে থাকায় জাতিসংঘ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, ‘ইসরায়েল একের পর এক যুদ্ধাপরাধ করছে’।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গাজা শহরের মানুষকে এলাকা ছেড়ে ‘চলে যেতে’ হুমকি দিয়েছেন। এছাড়া গত একদিনেই গাজায় আরও ৫২ জন নিহত হয়েছেন। একইসঙ্গে ক্ষুধায় আরও শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজা শহরের বাসিন্দাদের ‘এখনই চলে যেতে’ হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। একইসঙ্গে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান বেসামরিক মানুষকে ‘গণহত্যা’ এবং জীবনরক্ষাকারী সহায়তা সরবরাহ ইচ্ছাকৃতভাবে বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগে ইসরায়েলের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

সোমবার জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক অভিযোগ করেন, ইসরায়েল “একটির পর একটি যুদ্ধাপরাধ” করছে এবং গাজার ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা “বিশ্বের বিবেককে নাড়া দিচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) জবাবদিহি করার মতো যথেষ্ট কারণ আছে। গত জানুয়ারিতে আদালত ইসরায়েলকে গণহত্যা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছিল।

আল জাজিরা বলছে, ফলকার তুর্ক গাজায় “রক্তপাত বন্ধের” আহ্বান এমন এক সময়ে জানিয়েছেন যখন ইসরায়েলি বাহিনী গাজা শহরকে ধ্বংস করে দিচ্ছে এবং নগরীতে স্থল অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, রোববার সকাল থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫০টিরও বেশি ভবন ধ্বংস হয়েছে এবং আরও ১০০টির আংশিক ক্ষতি হয়েছে। সংস্থাটির মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল অভিযোগ করেন, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে বাস্তুচ্যুত পরিবারের শিবিরসংলগ্ন আবাসিক ভবনগুলোতে আঘাত হানছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২০০টিরও বেশি তাঁবু ধ্বংস হয়েছে।

তিনি জানান, তুফাহ এলাকায় ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার অভিযান চলছে। সেখানে ইসরায়েলি বোমায় আজ-জারকা জেলায় ভবন মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। মসজিদ ও খেলাধুলার মাঠও হামলার নিশানায় ছিল।

আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ গাজা শহর থেকে জানিয়েছেন, “একটির পর একটি সুউচ্চ ভবন ভেঙে পড়তে দেখা হৃদয়বিদারক। এগুলো শুধু ভবন নয়, এর সঙ্গে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য জরুরি সেবাগুলোও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, সেটিও আবার যুদ্ধের প্রায় দুই বছর পরও।”

আল জাজিরাকে স্থানীয় হাসপাতালগুলো জানিয়েছে, সোমবার একদিনেই অন্তত ৫২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, এর মধ্যে ৩২ জন প্রাণ হারিয়েছেন গাজা শহরের। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে, যাদের মধ্যে দুজন শিশু রয়েছে। ইসরায়েল নিয়মিতভাবে সাহায্য ঠেকানো বা বোমা হামলা করায় এ মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে।

চিকিৎসকরা জানান, সোমবার ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের মধ্যে ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ওসামা বালউশাও রয়েছেন।

ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় প্রায় ২৫০ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, যাদের সবাই ফিলিস্তিনি। ইসরায়েল বিদেশি সংবাদকর্মীদের গাজায় প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। আধুনিক ইতিহাসে সাংবাদিকদের জন্য এটিই সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাত।

অন্যদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, উত্তর গাজায় একটি ট্যাংকের নিচে রাস্তায় পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরিত হয়ে তাদের চার সেনা নিহত হয়েছে।