দুর্নীতি নিয়ে কঠোর সমালোচনার মুখে যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন টিউলিপ সিদ্দিকি। তবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার দাবি করেছেন, তদন্তে টিউলিপের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অসঙ্গতি পাওয়া যায়নি।মঙ্গলবার রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে এই দাবি করেন স্টারমার। তিনি বলেন, ‘প্রিয় টিউলিপ, আপনার পদত্যাগপত্রের জন্য ধন্যবাদ। অত্যন্ত ব্যথিত মনে আপনার মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগের বিষয়টি আমি গ্রহণ করছি। সিটি মিনিস্টার হিসেবে আপনি যে দায়িত্ব পালন করেছেন, তার জন্য ধন্যবাদ।’
এর পরই টিউলিপের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অসঙ্গতি পাওয়া যায়নি দাবি করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনার পদত্যাগপত্র গ্রহণের সঙ্গে আমি পরিষ্কার করতে চাই, আমার স্বাধীন পরামর্শক স্যার লরি ম্যাগনাস আমাকে নিশ্চিত করেছেন, মন্ত্রিত্বের আচরণবিধি লঙ্ঘনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি এবং আপনার আর্থিক অনিয়মের কোনো প্রমাণও নেই।’
স্বপ্রণোদিত হয়ে নিজের বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বান এবং তদন্তকারী স্যার লরি ম্যাগনাসকে এক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতা করায় টিউলিপকে আরও একবার ধন্যবাদ জানান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ‘ব্রিটেনকে সমৃদ্ধকরণে ও সরকারের কাজে কোনো বিঘ্ন না ঘটাতে আপনি যে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটির তারিফ করছি। আপনাকে স্পষ্ট করে জানাতে চাই, আপনার সামনে এগিয়ে যাওয়ার দরজা খোলা রয়েছে।’
এর আগে প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের কাছে টিউলিপ পদত্যাগপত্র জমা দেন বলে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান ও বার্তাসংস্থা রয়টার্স প্রতিবেদন প্রকাশ করে।পদত্যাগপত্রে টিউলিপ দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যে তদন্ত হয়েছে সেখানে মিনিস্ট্রিয়াল ওয়াচডগের উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস মন্ত্রিত্বের নীতি ভঙ্গের কোনো প্রমাণ পাননি।এছাড়া নিজের সকল আর্থিক বিষয়াবলীর ব্যাপারে তদন্তকারীকে তথ্য দিয়েছেন বলেও দাবি করেন এই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি।
তিনি মন্ত্রী থাকলে সরকার তার কাজে মনযোগ দিতে পারবে না- পদত্যাগপত্রে এমন কথা উল্লেখ করে টিউলিপ বলেন, ‘এ কারণে আমি আমার মন্ত্রির পদ থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানায়, টিউলিপের স্থলাভিষিক্ত হবেন পেনসনমন্ত্রী এমা রেনল্ডস।যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের নানা কেলেঙ্কারির খবর সামনে আনে কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মিত্রদের কাছ থেকে লন্ডনে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট নেওয়াসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ ওঠে।
এরইমধ্যে টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করতে প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের প্রতি আহ্বান জানান প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান কেমি ব্যাডেনোচ। এছাড়া সরকার দলীয় সংসদ সদস্যদের কয়েকজন টিউলিপের বিনামূল্যের ফ্ল্যাট পাওয়া নিয়ে তার বিরুদ্ধে কথা বলেন।সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার আত্মসাতের অভিযোগের তদন্তে শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপের নামও আসে। এ ঘটনায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভা অফিসের ন্যায় ও নৈতিকতা দল।তারই অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি) টিউলিপ সিদ্দিককে তার মন্ত্রিত্বের দুর্নীতিবিরোধী দিকগুলো থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানায় ইউকে অ্যান্টি-করাপশন কোয়ালিশন।
যুক্তরাজ্যের দুর্নীতিবিরোধী জোটটি ‘অর্থনৈতিক অপরাধ, অর্থ পাচার এবং অবৈধ অর্থায়ন প্রতিরোধের’ দায়িত্ব টিউলিপের পরিবর্তে অন্য একজন মন্ত্রীর কাছে হস্তান্তরে দেশটির সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের মন্ত্রী পর্যায়ের স্বার্থবিষয়ক স্বাধীন উপদেষ্টার গত সপ্তাহে শুরু হওয়া তদন্ত এবং বাংলাদেশে পৃথক তদন্তের অগ্রগতির আলোকে দুর্নীতিবিরোধী জোটটি এ আহ্বান জানায় বলে তাদের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে বলা হয়।ইউকে অ্যান্টি-করাপশন কোয়ালিশন বলে, ‘বর্তমানে টিউলিপের স্বার্থের একটি গুরুতর সংঘাত রয়েছে। তিনি যুক্তরাজ্যের অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনৈতিক অপরাধ প্রয়োগের কাঠামোর দায়িত্বে রয়েছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সঙ্গে তার সরাসরি পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে।’
(ঢাকাটাইমস