Image description
 

ভূমধ্যসাগরের মেনোর্কা বন্দরে বিভিন্ন দেশের ছোট-বড় জাহাজ নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে 'গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা' নামক এক বিশাল নৌবহর। চিকিৎসক, শিল্পী, আইনজীবী, শ্রমিক, পরিবেশকর্মী এবং বিভিন্ন দেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাও এই বহরের অংশ হয়েছেন। তাদের সবার উদ্দেশ্য অবরুদ্ধ গাজায় খাদ্য, ওষুধ এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া।

 

আয়োজকদের মতে, এটি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বেসামরিক নৌ অভিযান। এর মূল লক্ষ্য, ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের অবরোধ ভেঙে গাজার মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার তুলে ধরা। ফ্লোটিলার বেশিরভাগ জাহাজ বর্তমানে তিউনিসের দিকে রওনা দিয়েছে। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর সিসিলির কাটানিয়া ও তিউনিস বন্দর থেকে আরও জাহাজ যুক্ত হবে, যা ৫০টি জাহাজ এবং ৪৪টি দেশের পাঁচ শতাধিক মানুষের বিশাল বহর তৈরি করবে।

ইউরোপীয় বন্দর শ্রমিকদের কঠিন সংহতি
ইতালির জেনোয়া বন্দরে শ্রমিক এবং নাগরিকরা মশাল হাতে ফ্লোটিলার প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন। ক্যালপ নেতা রিকার্দো রুদিনু ঘোষণা দিয়েছেন, "আমাদের নৌকাগুলোর সঙ্গে যদি ২০ মিনিটও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়, তবে আমরা ইউরোপজুড়ে সব বন্দর বন্ধ করে দেব।" এই হুমকি নিছক কথার কথা নয়। এর আগে জেনোয়ার শ্রমিকেরা দুই দফায় অস্ত্রবাহী জাহাজ আটকে দিয়েছিল, কারণ তাদের দাবি ইতালির সংবিধান যুদ্ধবিরোধী এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী রাষ্ট্রে অস্ত্র রপ্তানি নিষিদ্ধ করে।

 

আন্তর্জাতিক সমর্থন ও ইসরায়েলি হুমকি
ফ্লোটিলার প্রতি সংহতি জানিয়েছে ১০০টিরও বেশি বর্তমান ও সাবেক জনপ্রতিনিধি। জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রান্সিস্কা আলবানিজ বলেছেন, এই মিশন আন্তর্জাতিক আইন পুরোপুরি মেনে চলছে। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভু পেত্রো অংশগ্রহণকারীদের প্রতি আবেগঘন বার্তা দিয়েছেন। এমনকি সুইডিশ পরিবেশকর্মী গ্রেটা থানবার্গও এটিকে বৈশ্বিক আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

 

তবে, ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইতামার বেন-গাবির এই বহরকে "সন্ত্রাসী উদ্যোগ" বলে অভিহিত করেছেন এবং সকলকে আটক করে ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

মিশনের নেপথ্যে ভয়াবহ বাস্তবতা
আয়োজকরা এই হুমকিতে ভীত নন। তারা বলছেন, সাধারণ মানুষ, পরিবার এবং ছোট ছোট সংগঠনগুলোর উদ্যোগে এই বহরটি দাঁড়িয়েছে। জেনোয়ার ক্যালপ সদস্য হোসে নিভৌলি ব্যাখ্যা করেছেন যে, তারা এই শৃঙ্খল ভাঙতে বদ্ধপরিকর, কারণ যে সামরিক শিল্পজোট ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করছে, সেই একই শক্তি শ্রমিকদের অধিকারও ক্ষুণ্ন করছে।

এই অভিযানের পেছনে রয়েছে গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের ৭০০তম দিনের ভয়াবহ বাস্তবতা। এই সময়ে নিহতের সংখ্যা ৬৪ হাজার ছাড়িয়েছে এবং পুরো অঞ্চল ধ্বংসস্তূপ, খাদ্যাভাব ও দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে 'গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা' আশার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।