Image description
 

জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিজয় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে নতুন অস্ত্রভাণ্ডার উন্মোচন করেছে চীন। এসব অস্ত্রের বেশিরভাগই প্রথমাবারের মতো দেখা গেছে। বিশাল এই অস্ত্রভাণ্ডারের কমপক্ষে পাঁচটি নতুন অস্ত্র বিশেষভাবে দৃষ্টি কেড়েছে।

 

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অস্ত্রভাণ্ডার যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করতে সক্ষম হলেও মূলত এটি 'প্রতিরোধ' হিসেবেই ব্যবহৃত হবে।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই)-এর চীন ও এশিয়া নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিচালক জিংডং ইউয়ান আনাদোলুকে বলেন, এই সামরিক ক্ষমতাগুলো 'সব মাত্রায় ছড়িয়ে আছে— আন্তঃমহাদেশীয় থেকে আঞ্চলিক, কৌশলগত থেকে কৌশলগত-অধিক, আকাশ, সমুদ্র, মহাকাশ এবং সাইবার জগতে।'

নতুন ৫টি শীর্ষ অস্ত্র কী কী?

জিংডং জানান, নতুন ডংফেং (ডিএফ) আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইলের সংস্করণ—যেমন ডিএফ-৫সি এবং ডিএফ-৬১, যেখানে ডিএফ-৬১-এ ১০টি পর্যন্ত এমআইআরভি ওয়ারহেড বহনের ক্ষমতা আছে। এছাড়া নতুন ডিএফ-২৬ডি অ্যান্টি-শিপ মিসাইল, ডিএফ-১৭ এবং ওয়াইজে-২১ হাইপারসনিক মিসাইল (মাখ ৬–১০ গতিসম্পন্ন), নতুন ক্যারিয়ার-ভিত্তিক যুদ্ধবিমান জে-৩৫ এবং জে-১৫টি, ওয়াইজে-১২ অ্যান্টি-শিপ ক্রুজ মিসাইল, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ড্রোন, বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র এবং কেজে-৬০০ এডব্লিউএসিএস আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা প্রদর্শিত হয়।

তার মতে, শীর্ষ পাঁচ অস্ত্র হলো-ডিএফ-৬১ আইসিবিএম, ডিএফ-১৭ হাইপারসনিক মিসাইল, ওয়াইজে-১২ অ্যান্টি-শিপ ক্রুজ মিসাইল, জে-১৫টি যুদ্ধবিমান, মানববিহীন ড্রোন এবং কেজে-৬০০ এডব্লিউএসিএস।

অন্যান্য অস্ত্রের মধ্যে ছিল এলওয়াই-১ লেজার অস্ত্র, পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ যুদ্ধবিমান জে-২০, বিভিন্ন প্রকার ড্রোন, সাবমেরিন ড্রোন এজেএক্স-০০২ এবং 'লয়্যাল উইংম্যান' নামে পরিচিত জিজে-১১ স্টেলথ আক্রমণাত্মক ড্রোন।

‘পুরো যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানার ক্ষমতা’

তাইওয়ান ভিত্তিক জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষক চিয়েন-ইউ শি বলেন, ডিএফ সিরিজ 'নিঃসন্দেহে যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্য করে তৈরি, শুধু গুয়াম বা হাওয়াই নয়, ডিএফ-৫সি সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম।'

চীন তার পারমাণবিক ত্রিমুখী শক্তি (আকাশ, সমুদ্র, স্থল) প্রদর্শন করে-

জিংলেই (JingLei-1) আকাশ থেকে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, জুলাং-৩ (JuLang-3) সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপযোগ্য আন্তঃমহাদেশীয় মিসাইল, ডিএফ-৬১ স্থলভিত্তিক আইসিবিএম, নতুন ডংফেং-৩১ স্থলভিত্তিক আইসিবিএম।

এসআইপিআরআই-র তথ্যমতে, ২০২৫ সালের শুরুতে চীনের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার প্রায় ৬০০-তে পৌঁছেছে, যা বিশ্বের মধ্যে দ্রুততম হারে বেড়েছে—প্রতি বছর গড়ে ১০০ ওয়ারহেড যোগ হচ্ছে।

মানববিহীন ও এআই-চালিত ব্যবস্থা

চীন আরও উন্মোচন করেছে সাবমেরিন ড্রোন, স্বয়ংক্রিয় জাহাজ, মাইন পাতা ব্যবস্থা, এমনকি 'রোবোটিক নেকড়ে'—যা গোপন অভিযান, মাইন অপসারণ বা শত্রু সেনা নির্মূলে ব্যবহৃত হতে পারে।

‘সামরিক-নাগরিক মিশ্রণের ফল’

এসআইপিআরআই-র জিংডং বলেন, এই অস্ত্রগুলো চীনের বার্তা দেয়: 'আমাদের সঙ্গে ঝামেলা করো না—আমাদের সক্ষমতা ও দৃঢ়তা আছে।'

তার মতে, এই সব  'সামরিক-নাগরিক মিশ্রণ নীতির বাস্তব ফল।'

‘প্রতিরোধের মাধ্যমে শান্তি’

ভারতের কৌশল বিশ্লেষক প্রভীন সাওহনি মন্তব্য করেন, প্যারেড 'প্রতিরোধের মাধ্যমে শান্তির ভিত্তি স্থাপন করেছে।'

তবে তাইওয়ানের গবেষক চিয়েন-ইউ মনে করিয়ে দেন, যদিও চীন উন্নত প্রযুক্তি অর্জন করেছে, তার প্রকৃত যুদ্ধ অভিজ্ঞতা নেই, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি মূলত যুদ্ধ অভিজ্ঞতায়।

তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র যদি একইসঙ্গে ইউক্রেন, মধ্যপ্রাচ্য এবং প্রশান্ত মহাসাগরে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তবে চীনের সামরিক সক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগজনক হয়ে উঠবে।

৮০ গোলার স্যালুট ও ৮০ হাজার শান্তির কবুতর

বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কয়ারে আয়োজিত এই মহাপ্যারেডে ২৬ জন বিদেশি নেতা উপস্থিত ছিলেন, যাদের মধ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনও ছিলেন।

৮০ রাউন্ড গোলাগুলির স্যালুট এবং ৮০ হাজার কবুতর উড়িয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন- 'মানবজাতি আবারও দাঁড়িয়ে গেছে এক মোড়ে—শান্তি নাকি যুদ্ধ, সংলাপ নাকি মুখোমুখি সংঘর্ষ, সহযোগিতা নাকি শূন্য-সম খেলা—এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত।'

সূত্র: আনাদোলু