Image description
 

ইরানের প্রতিরক্ষা খাতের মনোযোগ এখন আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায়। ধারণা করা হচ্ছে, ইসরাইল আবারো আকাশপথে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরানে। তাই এবার আকাশকেই ঢাল বানিয়ে নিজেদের রক্ষার কৌশল নিয়েছে তেহরান।

 

সম্প্রতি জাতীয় বিমান প্রতিরক্ষা দিবসে এক বার্তায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অফ স্টাফ মেজর জেনারেল আব্দুর রহিম মুসাফি বলেছেন, দেশের বিমান প্রতিরক্ষা শক্তিকে আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে নতুনভাবে সাজানোই সময়ের দাবি। তার ভাষায়, আগের যুদ্ধগুলো প্রমাণ করেছে— আকাশ নিয়ন্ত্রণ ছাড়া সার্বভৌমত্ব রক্ষা অসম্ভব।

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন ১৯৮০-এর দশকের আট বছরের প্রতিরক্ষাযুদ্ধের ইতিহাস এবং সাম্প্রতিক ১২ দিনের ইসরাইল-আমেরিকার আরোপিত আগ্রাসনের কথা। মুসাফি বলেন, বারবার আকাশ থেকেই ইরানকে দুর্বল করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু আজকের ইরান চার দশক আগের ইরান নয়।

 

এখন তাদের হাতে রয়েছে দেশীয়ভাবে তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, উন্নত রাডার এবং এমন প্রযুক্তি যা শত্রুর চোখ এড়িয়ে আকাশের যেকোনো নড়াচড়া শনাক্ত করতে সক্ষম।

 

মুসাফি সতর্ক করে বলেন, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে। শুধু প্রতিবেশী নয়, মহাশক্তিগুলোও আকাশপথেই আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। তাই প্রতিরক্ষা শক্তি বাড়ানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

তার মতে, ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী শুধু একটি শাখা নয়, বরং এটি জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রথম সারির ঢাল। আধুনিক প্রযুক্তি, দেশীয় উদ্ভাবন এবং দক্ষ জনবল মিলিয়েই এই ঢালকে শক্তিশালী করা হচ্ছে।

তিনি আরো জোর দিয়ে বলেন, প্রযুক্তি উন্নয়নের পাশাপাশি জাতীয় পর্যায়ে একটি সমন্বিত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি। অর্থাৎ সেনাবাহিনী ও আইআরজিসি (ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড কর্পস)-এর মধ্যে সমন্বয় ও কৌশলগত ঐক্যকে আরও শক্ত করতে হবে। কারণ ইসরাইল ও আমেরিকার মতো শক্তিশালী দেশ যদি যৌথভাবে আক্রমণ চালায়, তবে একক প্রতিরক্ষা দিয়ে তা ঠেকানো সম্ভব নয়।

প্রশ্ন উঠছে, এই ঘোষণা কি কেবল প্রতিরক্ষা দিবসের আনুষ্ঠানিক বার্তা, নাকি এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে আসন্ন সংঘাতের পূর্বাভাস? মধ্যপ্রাচ্যের আকাশ প্রতিদিন নতুন করে যুদ্ধের হুমকি নিয়ে ভরে উঠছে। তাই ইরানের এই কৌশলগত আহ্বানকে হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই।

যুদ্ধ শুধু মাটিতে নয়, আকাশেও হয়। আর আকাশের নিয়ন্ত্রণ মানেই যুদ্ধক্ষেত্রের অর্ধেক জয়। মুসাফির ভাষায়, ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা এখন আর শুধু রক্ষাকবচ নয়, এটি সম্ভাব্য যেকোনো শত্রুর জন্য হুঁশিয়ারি।

তাহলে কি ইরান এমন এক বাস্তবতার দিকে এগোচ্ছে যেখানে আকাশ সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে উঠবে? সময়ই তার উত্তর দেবে। তবে এতটুকু নিশ্চিত— ইরান তার আকাশকে আর কারো জন্য ফাঁকা রাখবে না।