Image description
 

অস্ট্রেলিয়ায় দুটি ইহুদি-বিরোধী হামলার মদদ দাতা ইরান। তাই তেহরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিডনি। দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ মঙ্গলবার (প্রেস ব্রিফিংয়ে) এমনটা বলেছেন। খবর বিবিসি ও সিবিএস নিউজের।

 

এছাড়াও, ইরানের রাষ্ট্রদূতকে দেশ ছাড়তে সাত দিন সময় দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।

 

অ্যালবানিজের উদ্বৃতিতি দিয়ে অস্ট্রেলিয়ান সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স অর্গানাইজেশন জানিয়েছে, গত বছরের অক্টোবর মাসে সিডনির লুইস কন্টিনেন্টাল কিচেন—একটি কোশের খাদ্য কোম্পানি এবং ডিসেম্বর মাসে মেলবোর্নের আদাস ইসরায়েল সিনাগগে অগ্নিসংযোগ হামলার নির্দেশ দিয়েছিল ইরানি সরকার।

তবে ইরানের সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ২০২৩ সালে ইসরায়েল–হামাস যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সিডনি ও মেলবোর্নে ইহুদি-বিরোধী ঘটনার সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।

অস্ট্রেলীয় কর্তৃপক্ষ এর আগে বলেছিল, বিদেশি শক্তিগুলো দেশীয় ভাড়াটে অপরাধীদের টাকা দিয়ে এসব হামলা চালাচ্ছে বলে তাদের সন্দেহ।

অ্যান্থনি অ্যালবানিজ সংবাদ সম্মেলনে জানান, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো গত বছরের অক্টোবরে সিডনির একটি ক্যাফেতে এবং ডিসেম্বরে মেলবোর্নের একটি সিনাগগে অগ্নিসংযোগ ঘটনার সঙ্গে ইরানের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে। এই দুটি ঘটনা ছিল আমাদের সমাজে বিভেদ সৃষ্টির এবং সামাজিক সংহতি দুর্বল করার প্রচেষ্টা।

রাষ্ট্রদূত আহমাদ সাদেঘি ও আরও তিনজন কর্মকর্তাকে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া তেহরান থেকে তাদের নিজস্ব কূটনীতিকদেরও ফিরিয়ে এনেছে।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত অস্ট্রেলিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রভাবে নেওয়া।

তবে অস্ট্রেলিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা এএসআইওর প্রধান মাইক বার্জেস জানান, দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে চলা অত্যন্ত জটিল তদন্তের পর প্রমাণ মিলেছে যে, এসব হামলার সঙ্গে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) শীর্ষ কর্মকর্তারা জড়িত।

বার্জেস সাংবাদিকদের বলেন, তারা মূলত অপরাধী ও সংঘবদ্ধ অপরাধচক্রের সদস্যদের ভাড়াটে হিসেবে ব্যবহার করেছে কিংবা তাদের নির্দেশ কার্যকর করেছে।

তিনি আরও জানান, সিডনির লুইস কন্টিনেন্টাল কিচেন (২০ অক্টোবর) এবং মেলবোর্নের আদাস ইসরায়েল সিনাগগে (৬ ডিসেম্বর) হামলায় জড়িত থাকার বিষয়টি আড়াল করতে আইআরজিসি জটিল এক প্রক্সি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেছে।

অস্ট্রেলিয়ার গোয়েন্দারা আরও প্রমাণ পেয়েছে যে, দেশটিতে ইরান আরও কিছু ইহুদি–বিদ্বেষী ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে। গত বছরের সাত অক্টোবর হামাসের (ইরানের মিত্র) ইসরায়েল আক্রমণ এবং পরবর্তী গাজা যুদ্ধের পর থেকে দেশটিতে ইহুদি স্কুল, বাড়ি, গাড়ি ও সিনাগগে একাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে।

এ সময়ের মধ্যে বেসরকারি সংগঠন ইসলামবিদ্বেষী ঘটনার বৃদ্ধি নথিভুক্ত করেছে। পুলিশ জানুয়ারিতেই ইঙ্গিত দিয়েছিল, ইহুদিদের সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির ওপর হামলার পেছনে বিদেশি প্রভাবশালী ব্যক্তি বা সংগঠনের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত তদন্তের ফলাফলকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী অ্যালবানিজ। তিনি ঘটনাগুলোকে আখ্যা দিয়েছেন ‘অস্বাভাবিক ও বিপজ্জনক আগ্রাসী কর্মকাণ্ড’ হিসেবে।

মেলবোর্নের সিনাগগে দ্বিতীয় ঘটনায় আগুন লাগার সময় উপাসনাকারীদের জীবন নিয়ে পালাতে হয়েছিল। হলোকাস্টে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা ১৯৬০ এর দশকে এই সিনাগগটি গড়ে তুলেছিলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওয়ং বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটাই প্রথমবার অস্ট্রেলিয়া কোনো রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করল।