
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সামরিক পোশাককে নিজের রাজনৈতিক প্রতীক বানিয়েছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ঘোষণা দিয়েছিলেন—যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আর স্যুট পরবেন না। তবে অবশেষে সেই প্রতিজ্ঞা ভাঙলেন তিনি। আর প্রতিজ্ঞা ভঙ্গের কারণ আর কেউ নয়, স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সোমবার (১৮ আগস্ট) স্থানীয় সময় দুপুরে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিতে গিয়ে কালো স্যুট পরে হাজির হন জেলেনস্কি। যদিও ফরমাল পোশাকের মধ্যেও তিনি সামরিক ছোঁয়া রেখেছেন। কালো স্যুট পরলেও পরেননি টাই।
এর আগে হোয়াইট হাউসে গিয়ে পোশাকের কারণে রীতিমতো অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখে পড়েছিলেন জেলেনস্কি। সামরিক পোশাক পরে বৈঠকে যোগ দেওয়ায় ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স তাকে ‘অকৃতজ্ঞ’ ও ‘অসম্মানজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। সেই বৈঠক উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি করে। মূলত সেই অভিজ্ঞতাই জেলেনস্কিকে পোশাক পরিবর্তনের দিকে ধাবিত করেছে।
নতুন রূপে হাজির হওয়া জেলেনস্কিকে এবার প্রশংসা করেছেন ট্রাম্পপন্থি সাংবাদিক ব্রায়ান গ্লেন। আগে সামরিক পোশাক নিয়ে কটাক্ষ করলেও এবার তিনি বলেন, ‘স্যুটে আপনাকে অসাধারণ দেখাচ্ছে।’ জবাবে জেলেনস্কির রসিকতা—‘আমি বদলেছি, কিন্তু আপনি একই স্যুটে আছেন।’ ট্রাম্পও এই পরিবর্তনের প্রশংসা করেছেন।
ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত বৈঠকের পর জেলেনস্কি দ্রুত কৌশল বদল করেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ শুরু করেন, সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা চালান এবং ইউরোপীয় নেতাদের কাছ থেকে পরামর্শ নেন। এরপর থেকে তিনি ন্যাটো সম্মেলন, পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যসহ নানা আন্তর্জাতিক মঞ্চে আরও ফরমাল পোশাক পরে হাজির হয়েছেন।
মার্কিন ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে সাম্প্রতিক বৈঠকের আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, এবার জেলেনস্কি সামরিক পোশাক পরে আসবেন না।
ফেব্রুয়ারির বৈঠকে ধন্যবাদ না দেওয়ার কারণে সমালোচিত হয়েছিলেন জেলেনস্কি। এবার সেই ভুল আর করেননি। বৈঠকের শুরুতেই মাত্র দশ সেকেন্ডে তিনি চারবার ‘ধন্যবাদ’ উচ্চারণ করেন। বক্তব্যে বলেন, ‘আমন্ত্রণের জন্য ধন্যবাদ। হত্যাকাণ্ড থামাতে ও যুদ্ধ বন্ধে আপনার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এই সুযোগ কাজে লাগাতে ধন্যবাদ। আর আপনার স্ত্রীকেও অনেক ধন্যবাদ।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার পর পোশাক ও আচরণে পরিবর্তন এনে হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির এবারের উপস্থিতি নিঃসন্দেহে কূটনৈতিকভাবে ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করছে।
সূত্র : দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া