Image description
 

ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে ফের নতুন ঝড় তুলেছেন রাষ্ট্রীয় জনতা দলের তরুণ নেতা তেজস্বী যাদব। বিহারে ভোটাধিকার আন্দোলনের মঞ্চ থেকে তিনি ঘোষণা করেছেন ২০২৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হবেন কংগ্রেস সাংসদ ও বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী।

তার এই ঘোষণায় রাজনৈতিক মহলে প্রবল আলোড়ন তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে তেজস্বী যে পথ দেখালেন, তাতে বিরোধী ঐক্যের অন্য নেতারা কতটা সায় দেবেন?

ঘটনার প্রেক্ষাপটও কম উত্তাল নয়। ভারতের নির্বাচন কমিশনের স্পেশাল ইন্টেনবিসভ রিভিশন (এসআইআর) প্রক্রিয়াকে বিরোধীরা শুরু থেকেই আক্রমণ করছে। তাদের অভিযোগ, বিজেপি সমর্থিত কমিশন পরিকল্পনা করে বিরোধী সমর্থকদের নাম বাদ দিচ্ছে ভোটার তালিকা থেকে। এই অভিযোগকেই হাতিয়ার করে বিহারে শুরু হয়েছে ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’, যার নেতৃত্বে আছেন রাহুল গান্ধী নিজে। আন্দোলনের মঞ্চ থেকে রাহুল সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের তিন শীর্ষ কর্মকর্তাকে ‘ভোটচুরি বরদাস্ত করব না, এবার প্রতিটি আসনে আপনাদের হাতেনাতে ধরব।’ তার কণ্ঠে ছিল স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, আর সেখানেই তেজস্বী ঘোষণা করেন, ‘আমরা নতুন প্রজন্ম। বেকারত্ব, বিভাজন আর দুর্নীতিতে ক্লান্ত মানুষ। এবার এনডিএ-কে উপড়ে ফেলব। আর রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী করার কাজ করব।’

 

এই ঘোষণার পর বিরোধী রাজনীতির ময়দান একেবারে সরগরম হয়ে উঠেছে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘রাহুলের নেতৃত্বেই মানুষ বিকল্প দেখছে। তিনি সংসদে যেমন শক্তভাবে মানুষের কথা তুলেছেন, রাস্তায়ও তেমন লড়াই করছেন।’ তৃণমূল কংগ্রেসের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন, ‘ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হলে গণতন্ত্রই থাকবে না। এই লড়াই রাহুল সাহসের সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, আমরা তার পাশে।’ দলের সাংসদ মহুয়া মৈত্রও বলেন, ‘ভোটচুরি রুখতে রাহুলের মতো কণ্ঠ আজ জরুরি। মানুষকে সচেতন করাটাই সবচেয়ে বড় কাজ।’

 

অন্যদিকে, সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব প্রতিক্রিয়ায় জানান, ‘যুব সমাজের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। রাহুল যেভাবে লড়ছেন, আমরা সম্মান জানাই। বিরোধী ঐক্য ঠিক করবে কে মুখ হবেন, কিন্তু তিনি নিঃসন্দেহে আজকের লড়াইয়ের কেন্দ্র।’ এই মন্তব্যে বোঝা যায়, বিরোধী ঐক্যের বড় অংশ রাহুলের নেতৃত্বকে অন্তত আন্দোলনের ময়দানে স্বীকার করে নিচ্ছে।

 

তবে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এ নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছে। অমিত শাহ কটাক্ষ করেছেন, ‘যে রাহুলকে মানুষ ২০১৪ আর ২০১৯-এ প্রত্যাখ্যান করেছেবিরোধীরা আবার তাকেই ভরসা করছেদেশের মানুষ বোঝে এরা শুধু ব্যর্থতার প্রতীক।’

অন্যদিকে, বিজেপি সভাপতি জে.পি. নাড্ডা বলেছেন, ‘ইন্ডিয়অ জোট বিভ্রান্ত করছে। কমিশনের কাজ আইনসম্মত, অথচ এই নাটকের মাধ্যমে তারা রাজনৈতিক মাইলেজ নিতে চাইছে।’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করে বলেন, ‘যাদের পরিবারবাদ ছাড়া কিছু নেই, তারা গণতন্ত্রের মঞ্চে অন্যকে পাঠ দিচ্ছে।’

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তেজস্বীর এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিরোধী জোট একটি ‘পরীক্ষামূলক বেলুন’ ছুড়েছে। কংগ্রেসের শক্তিশালী পুনরুত্থান, রাহুলের সংসদে আক্রমণাত্মক ভঙ্গি এবং তার নেতৃত্বে এই আন্দোলন সবই মিলে তাকে ফের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আনছে। তবে ঐক্যের বাকিরা আনুষ্ঠানিকভাবে কবে ও কতটা তাকে গ্রহণ করবেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

 

 

 

 

সব মিলিয়ে বলা যায়, রাহুল গান্ধী আবারও বিরোধী রাজনীতির মুখ হয়ে উঠছেন। আর তেজস্বীর ঘোষণায় যে তরঙ্গ তৈরি হয়েছে, তা আগামী বছরগুলোয় ভারতের রাজনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে।