
সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের আরাধ্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ আবির্ভাব তিথি জন্মাষ্টমী আজ (শনিবার, ১৬ আগস্ট)। হিন্দু পুরাণমতে, ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন। বিগত বছরগুলোর মতো দেশের হিন্দু সম্প্রদায় এবারও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে জন্মাষ্টমী উৎসব উদযাপন করবে।
এ উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ও আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। অবশ্য উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ হবে মিছিল বা শোভাযাত্রা। ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হওয়া মিছিলই জন্মাষ্টমীর মিছিল বা জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা নামে পরিচিত।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, পাশবিক শক্তি যখন ন্যায়নীতি, সত্য ও সুন্দরকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছিল, তখন সে শক্তিকে দমন করে মানবজাতির কল্যাণ ও ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটেছিল। তাদের আরও বিশ্বাস, দুষ্টের দমন করতে এভাবেই যুগে যুগে ভগবান মানুষের কাছে নেমে আসেন এবং সত্য ও সুন্দরের প্রতিষ্ঠা করেন।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে গতকাল (শুক্রবার, ১৫ আগস্ট) ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে সাংবাদিকদের সঙ্গে যৌথভাবে মতবিনিময় করে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি। সেখানে জানানো হয়, জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সংগঠন দুটি প্রতিবছরের মতো এবারও দুদিনের অনুষ্ঠানসূচি গ্রহণ করেছে। সূচি অনুযায়ী, আজ সকাল ৮টায় দেশ-জাতির মঙ্গল কামনায় শ্রীশ্রী গীতাযজ্ঞ, বিকেল ৩টায় ঐতিহাসিক কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী মিছিল এবং রাতে শ্রীকৃষ্ণ পূজা হবে। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে গীতাযজ্ঞ পরিচালনা করবে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের শংকর মঠ ও মিশন। বিকেল ৩টায় পলাশীর মোড়ে কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী মিছিলের উদ্বোধন হবে।
মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, এবার এক নবযুগের সূচনা করবে এ ঐতিহাসিক মিছিল। আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল হাসান মাহমুদ খান এবং সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. মঈন খান। এক নতুন আঙ্গিকে ঐতিহ্যের নান্দনিক উপস্থাপনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর এ ঐতিহাসিক মিছিল প্রতি বছরের মতো একইপথ ঘুরে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে গিয়ে শেষ হবে। রাতে ঢাকেশ্বরী মেলাঙ্গনে শ্রীকৃষ্ণ পূজার পর প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষ হবে।
দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান হবে আগামী মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট)। ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে সেদিন বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠেয় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। বিশেষ অতিথি থাকবেন হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন মজুমদার।
জন্মাষ্টমী উৎসব ঘিরে নিরাপত্তা আশঙ্কা আছে কি না, এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, ‘সরকার পরিপূর্ণ নিরাপত্তার পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা আশা করছেন, কোনো সমস্যা হবে না। বরাবরের মতো এবারও উৎসবমুখর পরিবেশে ঢাকাসহ সারাদেশে জন্মাষ্টমী উৎসব উদযাপিত হবে।’
মতবিনিময় সভায় মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, ‘নানা দৃশ্যপট নিয়ে জন্মাষ্টমী শোভাযাত্রা আজ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নানা আয়োজনে পূজা ছাড়াও শোভাযাত্রা-মিছিল বেরোয়, সাংস্কৃতিক আয়োজন থাকে। আমরা পূজা ছাড়াও মিছিলে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, সৌন্দর্য রক্ষা ও নিরাপত্তার স্বার্থে নানা পদক্ষেপ নিয়েছি এবং সারাদেশে এসব পদক্ষেপ অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছি। যেমন আমরা বলেছি, জন্মাষ্টমীর দিন সকালে যারা শোভাযাত্রা বের করবেন, তাদের দুপুর ১২টার মধ্যে শেষ করতে হবে। আর বিকেলে যারা আয়োজন করবেন, তাদের বিকেল ৩টার পরে বের করতে হবে এবং সন্ধ্যার আগেই শেষ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকায় কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমীর মিছিলে উপস্থিতি প্রতি বছরই বাড়ছে। রাজধানীর প্রতিটি মন্দির ও সংগঠন মিছিলে অংশগ্রহণ করবে নানা দৃশ্যপট নিয়ে ধর্মীয় আঙ্গিক বজায় রেখে। এ ঐতিহাসিক জন্মাষ্টমী মিছিল সর্বজনীনতা ও সমঅধিকারের চেতনার বিকাশে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।’