Image description

গত বুধবার (১৩ আগস্ট) বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের বিভিন্ন ব্যাচের ২০ জন কর্মকর্তাকে বদলি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সরকারি কলেজ-২ শাখা। মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে আপলোড করার মাত্র ১৭ মিনিটের মাথায় তা ‘উধাও’ হয়ে গেছে। এরপর তা আর ওয়েবসাইটে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, বদলির প্রজ্ঞাপন জারি হওয়া এই ২০ জন কর্মকর্তার মধ্যে একজন হলেন ইব্রাহিম মিয়া। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) আওতাধীন সরকারি কলেজসমূহে বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ প্রকল্পের (হোসেফ প্রজেক্ট) গবেষণা কর্মকর্তা (অর্থ ও ক্রয়) হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। এই প্রজ্ঞাপনে তাকে ফরিদপুরের বীরশ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফ সরকারি কলেজে বদলি করা হয়। ৩৬তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের এই কর্মকর্তা ছাত্রজীবনে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। 

অভিযোগ উঠেছে, এই প্রজ্ঞাপন জারির পরপরই ইব্রাহিমের বদলি ঠেকাতে মারিয়া প্রজেক্টের পিডি (পরিচালক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাহমুদ হোসেন। তার এই বদলি ঠেকাতে মন্ত্রণালয়ে দৌড়ঝাঁপ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কারণ এই প্রকল্পে সকল দুর্নীতিতে পিডির একমাত্র সহযোগী ইব্রাহিম বলে অভিযোগ তাদের। পরেরদিন ১৪ আগস্টও এই প্রজ্ঞাপনটি ওয়েবসাইটে দেখা যায়নি। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ইব্রাহিমকে বাদ দিয়ে প্রজ্ঞাপনটি ওয়েবসাইটে আগামীকাল রবিবার (১৭ আগস্ট) কিংবা সোমবারের (১৮ আগস্ট) মধ্যে পুনরায় জারি হতে পারে।

সেই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, আগামী ২০ আগস্টে মধ্যে এই ২০ জন কর্মকর্তার বর্তমান কর্মস্থল হতে অবমুক্ত হবেন। অন্যথায় একই তারিখ অপরাহ্ণে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত মর্মে গণ্য হবেন। কর্মকর্তাগণ আবশ্যিকভাবে নিজ নিজ পিডিএস এ লগইনপূর্বক অবমুক্ত ও যোগদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন। জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো।

জানা যায়, ২০১৮ সাল থেকে হোসেফ প্রজেক্টে কর্মরত গবেষণা কর্মকর্তা ইব্রাহিম মিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৭-০৮ সেশনের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। এ ছাড়া তিনি শহীদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। 

অভিযোগ রয়েছে, ২০১৮ সালের হোসেফ প্রকল্প শুরু হলে ইব্রাহীম পতিত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বদলি নীতিমালা লঙ্ঘন করে প্রথম নিয়োগের মাত্র ছয় মাসের মাথায় এই প্রকল্পের গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন পায়। বিগত ছয় বছর এই প্রকল্পে কাজ করতে গিয়ে অসংখ্য দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। তাছাড়া ২০২৪ সালের ৩ আগস্টে শেখ হাসিনার পক্ষে হওয়া মাউশিতে মিছিলেও তিনি ছিলেন।

নিয়মানুযায়ী, বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভবন নির্মাণের কাজ ৮৫ শতাংশ সমাপ্ত হলে অন্যান্য  বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি কিনতে হয় কিন্তু এই প্রকল্পের এই নিয়ম মানা হয়নি। 

প্রজ্ঞাপনে বদলি হওয়া বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ইব্রাহিম মিয়া তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে অবৈধভাবে এই প্রজেক্টে পদায়ন নেন ২টি বিধি ভঙ্গ করে। বিধি অনুসারে  চাকরির প্রথম দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগে ঢাকায় পদায়ন সম্ভব নয়। কিন্তু তিনি অবৈধ ক্ষমতার বলে ১ বছর হওয়ার আগেই ঢাকায় আড়াই হাজার কোটি টাকার এই প্রজেক্টে পদায়ন নেন। তিনি এসেই এখানে দুষ্টচক্রের সিন্ডিকেট গড়ে তুলে। এখানে হিসাবরক্ষক শাহআলম আর ইব্রাহিম মিয়া একই কলেজের ছাত্র। দুষ্ট চক্রের সহযোগী গবেষণা কর্মকর্তা ইব্রাহিম মিয়া, দুই এপিডি ফারজানা আবেদীন খানম ও শরফুদ্দীন মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, হিসাবরক্ষক শাহআলম সিকদার, অফিস সহায়ক রুবেল। এই দুষ্ট চক্র কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে, গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তদন্ত করলেই এদের অপকর্ম বের হয়ে আসবে। ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট শিক্ষা ভবনের সামনে জুলাই আন্দোলনের বিরুদ্ধে শ্লোগানধারীদের মধ্যে ইব্রাহিম অন্যতম। অথচ তার কিছুই হয়নি।

এ বিষয়ে ইব্রাহিম মিয়া দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমি এখনো বদলির আদেশ পাইনি। চাকরি ও ছাত্রজীবন দুটো একেবারেই ভিন্ন বিষয়, তাই ছাত্রজীবনের কোনো পরিচয় মাউশিতে দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না এবং এটি নিয়ে কোনো ধরনের মন্তব্যও করতে চাই না। চাকরির বদলি নিয়ে আমি কোনো ধরনের তদবির করছি না। পিডি স্যার করছেন কিনা, সেটা উনি ভালো বলতে পাবেন। এ ছাড়াও ২০২৪ সালের ৪ আগস্টে শেখ হাসিনার পক্ষে হওয়া মাউশির কোনো মিছিলে ছিলাম না।’

এদিকে ইব্রাহিমের বদলি ঠেকাতে বিএনপির তরুণ দে নামে এক নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, ‘ইব্রাহিম সেখানের একজন কর্মকর্তা। আর আমি ঠিকাদারি নিয়ে সে প্রকল্পে কাজ করি। তবে আমার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগটি ভিত্তিহীন। এ ছাড়া আমি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা লিয়াকত শিকদারের সাথে মিলে এই প্রকল্পে ঠিকাদারির কাজ করতাম এ অভিযোগটিও মিথ্যা।’

এ বিষয়ে হোসেফ প্রকল্পের পিডি প্রফেসর মাহমুদুল দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আপাতত কথা বলতে পারব না। আমি অসুস্থ পরে কথা বলা হবে।’

বিষয়টি নিয়ে জানতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব (কলেজ শাখা) মো. আব্দুল কুদ্দুসকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।