
আবারও রণ উত্তেজনায় ভারত-পাকিস্তান। রাজনৈতিক ইঙ্গিত আর সামরিক প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে ক্ষণে ক্ষণে ফুঁসে উঠছে দেশ দুটি। ইতিহাসের কালো অধ্যায়গুলো যেন পুনরাবৃত্তি করতে চায় ভারত-পাকিস্তান। সাম্প্রতিক ধোঁয়াশা, কূটনৈতিক টানাপোড়েন এবং পালটাপালটি হুমকির বার্তা ইঙ্গিত দিচ্ছে উপমহাদেশে সম্ভাব্য ‘বড় যুদ্ধের’ ছায়া ক্রমশ ঘন হচ্ছে। ৪ আগস্ট ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী সতর্ক করে বলেছেন, দেশের পরবর্তী যুদ্ধ প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুত শুরু হতে পারে এবং সেটি মোকাবিলায় লাগবে পুরো জাতির সম্মিলিত শক্তি। অন্যদিকে সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে বসে ভারতের বিরুদ্ধে পারমাণবিক যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। ফ্লোরিডায় এক নৈশভোজে বলেছেন, পাকিস্তান যদি অস্তিত্ব সংকটে পড়ে, তবে তারা বিশ্বের অর্ধেককে সঙ্গে নিয়েই ধ্বংস হবে। রয়টার্স, এনডিটিভি।
টানা ১১ বছর শক্ত শাসনের পর হঠাৎ কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দেশের ভেতরে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ বেড়েই চলেছে। নিজ দেশের জনগণই যাচ্ছেন বিপক্ষে। দুই প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও পাকিস্তান নিয়েও স্বস্তিতে নেই দেশটি। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্ক একেবারে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে মোদিকে। এমন ক্রান্তিকালে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে যুদ্ধকেই যেন হাতিয়ার হিসাবে বেছে নিচ্ছেন ভারতের এই প্রধানমন্ত্রীও। ঠিক যেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর মতোই। ইতোমধ্যে যুদ্ধ ঘনিয়ে আসার সতর্কবার্তাও দিয়েছেন ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। ৪ আগস্ট আইআইটি মাদ্রাজে এক ভাষণে তিনি বলেন, দেশের পরবর্তী যুদ্ধ প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুত শুরু হতে পারে এবং সেটি মোকাবিলায় লাগবে পুরো জাতির সম্মিলিত শক্তি। ভাষণে তিনি আরও বলেন, ‘পরেরবার এটি আরও বড় হতে পারে। এবং সেই দেশটি একা যুদ্ধ করবে নাকি অন্য কোনো দেশের সমর্থনে করবে, আমরা জানি না। তবে আমার দৃঢ়বিশ্বাস, দেশটি একা থাকবে না। এখানেই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’
অন্যদিকে সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে বসে ভারতের বিরুদ্ধে পারমাণবিক যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। ফ্লোরিডায় এক নৈশভোজে বলেছেন, পাকিস্তান যদি অস্তিত্ব সংকটে পড়ে, তবে তারা বিশ্বের অর্ধেককে সঙ্গে নিয়েই ধ্বংস হবে। ইতিহাসের কালো অধ্যায়গুলোর যেন পুনরাবৃত্তি করতে চায় ভারত-পাকিস্তান। সাম্প্রতিক ধোঁয়াশা, কূটনৈতিক টানাপোড়েন এবং পালটাপালটি হুমকির বার্তা ইঙ্গিত দিচ্ছে-উপমহাদেশে সম্ভাব্য ‘বড় যুদ্ধের’ ছায়া ক্রমশ ঘন হচ্ছে।
উপেন্দ্র দ্বিবেদী বলেছেন, ‘আমরা যে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি, সেটা হয়তো খুব শিগ্গিরই হতে পারে। এবার আমাদের সবাইকে একসঙ্গে লড়তে হবে। যদিও কোনো দেশের নাম নেননি তিনি। সেনাপ্রধান আরও বলেছেন, ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনার পরপরই এই পরিকল্পনা শুরু হয়। এর কিছুদিন পর সোমবার আসিম মুনির বলেছেন, ‘আমরা পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। যদি আমাদের মনে হয় আমরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছি, তাহলে আমাদের সঙ্গে বিশ্বের অর্ধেককে নিয়েই ধ্বংস হব।’ এছাড়া ভারতের সিন্ধুনদীর ওপর বাঁধ বা অন্য কোনো অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে মুনির বলেছেন, এমন কিছু হলে সেটি ধ্বংস করতে দ্বিধা করবে না পাকিস্তান। তিনি জানিয়েছেন, ‘আমরা অপেক্ষা করব, ভারত বাঁধ তৈরি করুক। আর তৈরি করলেই সেটি মিসাইল দিয়ে ধ্বংস করব। সিন্ধুনদী ভারতীয়দের পারিবারিক সম্পত্তি নয়, আমাদের মিসাইলের কোনো অভাব নেই, আলহামদুল্লিাহ।’ মুনির আরও বলেছেন, ভারতের আগ্রাসনের কারণে অঞ্চলটি বিপজ্জনকভাবে যুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে। যেখানে কোনো ভুল হিসাবনিকাশও বড় বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। আসিম মুনিরের পর ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও। সিন্ধুনদীর পানি স্থায়ীভাবে আটকে রাখার পরিকল্পনা করলে ভারতকে উচিত শিক্ষা দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষ্যে ইসলামাবাদে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শাহবাজ বলেন, ‘আমি শত্রুদের পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, যদি আপনারা আমাদের পানি আটকে রাখার পরিকল্পনা করে থাকেন এবং এ সংক্রান্ত কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেন, সেক্ষেত্রে আপনাদের উচিত শিক্ষা দেব। এমন শিক্ষা দেব, কখনো তা ভুলবেন না।’
এদিকে মুনিরের পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ভারত। দেশটির অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র যখনই পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সমর্থন দেয়, তখনই এই বাহিনী তাদের আসল রূপ দেখায়। সোমবার ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, পারমাণবিক হুমকি দেওয়া পাকিস্তানের পুরোনো অভ্যাস, যা আবারও দেখা গেল। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নিজেরাই বুঝতে পারবে, এমন মন্তব্য কতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন। নয়াদিল্লি কোনোভাবেই পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইলের কাছে নতি স্বীকার করবে না এবং জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া অব্যাহত রাখবে বলেও জানিয়েছে ভারতের মন্ত্রণালয়।