
ভারী বৃষ্টি এবং ভারতের গজলডোবা ব্যারোজের সবগুলো গেট খুলে দেয়ায় লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হয়। সকাল ৯টায় ৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হয়। দুপুর ১২টায় আরো তিন সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হয়।
এতে নিম্নাঞ্চলের ৩৫টি গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে রোপা আমনসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত। পানি পরিস্থিতি সামাল দিতে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে ৪৪টি জলকপাট সার্বক্ষণিক খুলে পানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
পাউবো সূত্র জানিয়েছে, আগামী দুই/তিনদিন এই অঞ্চলে ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢল অব্যাহত থাকতে পারে। এতে লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনিত হওযার আশঙ্কা রয়েছে।
তিস্তাপাড়ের গোবর্দ্ধন গ্রামের মোবারক হোসেন বলেন, দুইদিন ধরে চরাঞ্চলের প্রায় বাড়ি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানির কারণে সাপ, পোকামাকড়ের উপদ্রুত বেড়েছে। গরু ছাগলের খাদ্য ও রাখার মতো শুকনো জায়গাটুকু মিলছে না।
আদিতমারী মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্ধন এলাকার কাচুয়া শেখ বলেন, বন্যার পানিতে পাঁচদিন ধরে রান্না করতে না পাড়ায় শুকনো রুটি ও চিড়া গুড় একমাত্র ভরসা। গরু-ছাগল ও পরিবারের সদস্যদের উঁচু জায়গায় রেখেছি। ত্রাণ নয়, চাই পানি যেন আর ভারত থেকে না আসে।
সাবেক স্কুল শিক্ষক মহিরুদ্দিন বলেন, ভারত সরকার আমাদের সঙ্গে তামাশা শুরু করেছে। শুষ্ক মৌসুমে যখন পানির জন্য হাহাকার অবস্থা তখন গেট বন্ধ করে দিয়ে আমাদেরকে কষ্টে রাখে। আর বন্যা মৌসুমে যখন পানির প্রয়োজন নেই তখন তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা গজলডোবা ব্যারেজের ৫৪ টি গেট খুলে দিয়ে আমাদেরকে ভাসিয়ে দেয়। আমি ভারতের এই অমানবিক আচরণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
তিস্তাতীরের উত্তর গড্ডিমারী গ্রামের মোন্তাজ মিয়া, বলেন, রাস্তা ঘাট ডুবে গেছে। আমাদের গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে হাঁটু কিংবা কোমড় পর্যন্ত পানি।
পানির সো সো শব্দে রাতে ঘুমাতে পারিনি। আতঙ্কে থাকি শিশু বাচ্চাদের নিয়ে, কখন যেন পানিতে পড়ে যায়। কষ্ট নিয়ে জীবন কাটে আমাদের তিস্তা পাড়ের মানুষদেরকে।
ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নের প্রায় কয়েক হাজারের বেশি পরিবার টানা দুইদিন ধরে পানিবন্দি রয়েছে। তাদের তালিকার পাশাপাশি খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় সংযোগ তিস্তা সেতুর পশ্চিম পাশের সেতু রক্ষা ৯০০ মিটার বাঁধের প্রায় ৬০ মিটার জায়গার ব্লক ধসে গিয়ে স্থানটিতে প্রায় ৭০ ফুট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
এতে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে লালমনিরহাট-রংপুর অঞ্চলের যোগাযোগ সড়কসহ ওই এলাকার প্রায় ১০০০ পরিবার। উজানের ঢলে নেমে আসা তীব্র স্রোত সরাসরি এসে আঘাত হানছে তিস্তা সড়ক সেতু রক্ষা বাঁধের গায়ে। এতে নিচের অংশের মাটি ভেসে গিয়ে ধসে পরছে ব্লকগুলো।
পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার জানান, বৃষ্টি ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃহস্পতিবার আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে তিস্তাপাড়ের নিম্নাঞ্চলে দেখা দিয়েছে বন্যা। তাই এসব অঞ্চলের জনগণকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিক পানি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।
তিস্তা ব্যারেজের নিবাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, পানির চাপ সামাল দিতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেট খোলা রাখা হয়েছে । আমরা সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ও রাস্তাগুলো পর্যবেক্ষণ করছি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দার বলেন, পানিবন্দি পরিবারগুলোর মাঝে কিছু প্যাকেটজাত শুকনো খাবার ও জিআর চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, খুব দ্রুত বিতরণ করা হবে। আরও কিছু শুকনো খাবারের জন্য বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।