Image description

দোহা চুক্তি স্বাক্ষর নিজ পরাজয়ে আমেরিকার লিখিত দস্তখত বলে মন্তব্য করেছেন ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের সিনিয়র নেতা ও দোহা সংলাপের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য আনাস হক্কানী।

তিনি বলেন, দোহা চুক্তি স্বাক্ষর ছিলো নিজ পরাজয়ে আমেরিকার লিখিত দস্তখত। এখন একে শান্তি চুক্তি বা অন্য যে নামই দেওয়া হোক না কেনো।

সোমবার (১১ আগস্ট) তলো নিউজের এক প্রতিবেদনে একথা জানানো হয়।

তিনি আরো বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য ছিলো পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা। তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির পালিয়ে যাওয়া ঘটনার গতিপথ বদলে দেয়।

তিনি দৃঢ়তার সাথে আনাস হক্কানী বলেন, আমেরিকা ইমারাতে ইসলামিয়ার সাথে আলোচনায় বসতে শুরুতে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করলেও শেষমেশ আলোচনায় বসতে বাধ্য হয়েছিলো।

সমঝোতার মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চাওয়ার স্বপক্ষে প্রমাণ হিসেবে তিনি বলেন, আপনারা মুজাহিদ সাহেবের সেই সময়ের বক্তব্য দেখতে পারেন। সেটি ছিলো সকালে, যখন কাতারে আমাদের বন্ধুরা একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য কাজ করছিলেন। যেনো নতুন সরকারের বৈধতা অক্ষুণ্ণ থাকে এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত না হয়। এজন্যই আমাদের নেতারা পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে কাবুলে প্রবেশের জন্য প্রচুর চেষ্টা করেছিলেন।

মার্কিন মদদপুষ্ট প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির পলায়ন ঘটনার গতিপথ বদলে দেয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমেরিকা এর পূর্বে কয়েকবার সমঝোতার জন্য আমাদের সাথে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছিলো। কিন্তু প্রতিবারই নীতির পরিবর্তন এনে সরে দাঁড়ায়।

দোহা আলোচনার সময় যুদ্ধ ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র অবস্থায় ছিলো। আমেরিকাও তীব্রতার ফলে তখনই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলো যে আফগানিস্তান থেকে চলে যেতে হবে। যদিও তখন পর্যন্ত তারা প্রকাশ্যে এই সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেয়নি।

অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও আলোচনা বা সংলাপে বসার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাদের নেতারা কোনো কিছুতেই ভরসা পাচ্ছিলেন না। চুক্তি সাক্ষর সত্ত্বেও অপর পক্ষ এর থেকে পিছিয়ে যেতে পারে। কারণ এর কোনো নিশ্চয়তা ছিলো না। এমনকি মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোও আমাদের তেমন নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। কিন্তু আমরা চেয়েছিলাম, তারা যেনো সবার চোখের সামনে চুক্তিতে সই করে, যা হবে আদতে নিজেদের পরাজয়ে নিজেদের দস্তখত।

আনাস হক্কানী এই চুক্তিকে আফগান ইমারাত সরকারের নিকট আমেরিকা কর্তৃক বৈধভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর প্রক্রিয়া বলেও বর্ণনা করেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইদরিস মুহাম্মাদি জাজি তালেবান ও আমেরিকার মধ্যকার দোহা চুক্তি প্রসঙ্গে বলেন, “আমেরিকা যে শর্ত, অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো তা এখনো রক্ষা করেনি। তারা এখনো বিভিন্ন ধরণের নিষেধাজ্ঞা, তালেবান নেতাদের কালো তালিকাভুক্তি ও অন্যান্য বিধিনিষেধ বহাল রেখেছে, যা চুক্তির পরিপন্থী। আমেরিকার উচিত এবিষয়ে মনোযোগ দেওয়া।”

সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি, কাতারের দোহায় তালেবান ও আমেরিকার মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি সাক্ষরিত হয়। যা দোহা চুক্তি নামে পরিচিত। এই চুক্তি সাক্ষরের মধ্যদিয়ে কাগজে-কলমে আফগান যুদ্ধে আমেরিকার পরাজয় ঘটে এবং সেনা প্রত্যাহার করতে শুরু করে।

তালেবান বা তাদের ইসলামী রাষ্ট্র কাঠামো ইমারাতে ইসলামিয়ার পক্ষে এর বর্তমান উপ-প্রধানমন্ত্রী (অর্থ) মোল্লা আব্দুল গণী বারাদার এবং আফগানিস্তানে আমেরিকার সাবেক বিশেষ প্রতিনিধি জালমী খলিলজাদ আমেরিকার পক্ষে এই ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

চুক্তিতে বলা হয়েছিলো, ইমারাতে ইসলামিয়া কর্তৃক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দানের বিনিময়ে আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনাদের সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা হবে, যা আন্তঃআফগান আলোচনা শুরু করার পথ সুগম করবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতির আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটাবে।