
ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সম্পর্ক নতুন করে উত্তেজনার মুখে পড়েছে। সাবেক উপ-রাষ্ট্রপতি এম. ভেঙ্কাইয়া নাইডুর মতে, কৌশলগত ও জাতীয় স্বার্থে ভারত কোনোভাবেই আপস করবে না। যুক্তরাষ্ট্রের চাপ কিংবা হুমকি- কোনোটিই ভারতের পথ রোধ করতে পারবে না। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
শনিবার (৯ আগস্ট) চেন্নাইয়ে এমএস স্বামীনাথন শতবর্ষ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নাইডু স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “আমরা জ্বালানি নিরাপত্তা রক্ষা করব এবং জাতীয় স্বার্থে অটল থাকব। হুমকির মুখে নত হওয়ার প্রশ্নই আসে না- ভারতে হুমকি কাজ করবে না।”
তিনি জানান, ভারত এখন আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠছে এবং ‘শেয়ার অ্যান্ড কেয়ার’ নীতির ভিত্তিতে বিশ্ব সহযোগিতায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে তার এই বক্তব্য এসেছে এমন এক সময়ে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করেছেন এবং ভারতকে ‘মৃত অর্থনীতির’ দেশ বলে কটাক্ষ করেছেন।
নাইডুর মতে, ভারতের দ্রুত অগ্রগতি ও বিশ্বজুড়ে স্বীকৃতি কিছু দেশের মধ্যে ঈর্ষা তৈরি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “তারা আমাদের উন্নতি সহ্য করতে পারছে না- তাদের হজমে সমস্যা হচ্ছে।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, কৃষক, গবেষক ও তরুণদের অবদানে ভারত বৈশ্বিক অর্থনীতিতে চতুর্থ থেকে দ্রুত তৃতীয় স্থানে পৌঁছাবে। একইসঙ্গে প্রশ্ন তোলেন- মিত্র দেশ ভারতের ওপর বেছে বেছে শুল্ক আরোপ কতটা ন্যায়সঙ্গত, যখন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই রাশিয়া থেকে ইউরেনিয়াম ও সার আমদানি করছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিপুল অপরিশোধিত তেল কিনছে।
নাইডু বলেন, “আমরা বন্ধু ছিলাম, এবং আমেরিকাকে সবসময় শ্রদ্ধা করেছি- তারা প্রাচীনতম গণতন্ত্র, আমরা বৃহত্তম গণতন্ত্র। পারস্পরিক শ্রদ্ধা থাকা উচিত। কিন্তু কোনো উসকানি বা যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই ভারতের বিরুদ্ধে যা বলা হচ্ছে, তা সত্যিই দুঃখজনক।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া থেকে তেল কেনার ‘অপরাধে' বুধবার (৬ আগস্ট) প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতের ওপর যে বাড়তি ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করেছেন, সেই ধাক্কা থেকেই দিল্লি এখনো বেরোতে পারেনি। ভারতীয় পণ্যের ওপর এখন মোট মার্কিন শুল্ক হতে যাচ্ছে ৫০ শতাংশ; যে পদক্ষেপ এই ঘোষণার ঠিক তিন সপ্তাহ পর অর্থাৎ আগামী ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।
এই পদক্ষেপকে ভারত সরকার বিবৃতি দিয়ে ‘অন্যায়’ ও ‘অযৌক্তিক’ বলে বর্ণনা করেছে। আর ৫০ শতাংশ শুল্কের ধাক্কা সামলানো অসম্ভব ও পথে বসার শামিল বলে জানিয়েছেন ভারতীয় রপ্তানিকারকরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের রপ্তানিমুখী বাণিজ্য ও সার্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর এত বড় আঘাত স্মরণকালের মধ্যে আসেনি। যেহেতু দুই দেশ এখনো কোনো সমঝোতায় আসতে পারেনি তাই ওয়াশিংটন-দিল্লি বাণিজ্য দ্বন্দ্বের শেষ কোথায় তা এখনো অজানা।