Image description

পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনাদের উপস্থিতিতেই রুশ কূটনৈতিক মিশনের একটি গাড়িতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা। পশ্চিম তীরের রামাল্লাহর পূর্ব দিকে ‘গিভাত আসাফ’ নামের এক অবৈধ বসতির পাশে সংঘটিত এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে রাশিয়া। ভিয়েনা কনভেনশন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে মস্কো এ বিষয়ে ইসরায়েল সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে।

 

মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা এক বিবৃতিতে বলেন, "এই হামলাকে আমরা ১৯৬১ সালের ডিপ্লোম্যাটিক সম্পর্ক বিষয়ক ভিয়েনা কনভেনশনের গুরুতর লঙ্ঘন হিসেবে দেখছি। সবচেয়ে হতবাক করার বিষয় হলো, ইসরায়েলি সেনাদের উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও তারা হামলা প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।"

জাখারোভার দেয়া তথ্যমতে, ৩০ জুলাই তারিখে প্যালেস্টাইন অথরিটির (পিএ) সঙ্গে রাশিয়ার কূটনৈতিক মিশনের একটি গাড়ি (যার উপর কূটনৈতিক নম্বরপ্লেটও ছিল) গিভাত আসাফের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একদল ইসরায়েলি বসতি বাসিন্দার হামলার শিকার হয়। তারা গাড়িটিতে ভাঙচুর চালায় এবং রুশ কূটনীতিকদের হুমকি দেয়।

তিনি আরও জানান, "ঘটনাস্থলে থাকা ইসরায়েলি সেনারা হামলাকারীদের ঠেকাতে কোনো চেষ্টাই করেনি।"

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গাড়িটিতে রাশিয়ার প্যালেস্টাইন মিশনের কূটনীতিকরা ছিলেন। ঘটনার পরপরই টেল আবিবে অবস্থিত রুশ দূতাবাস ইসরায়েল সরকারের কাছে একটি ডিমার্শ (আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদপত্র) পাঠিয়েছে।

ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে এই ইস্যু তোলেন রাশিয়ার প্রথম উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি দিমিত্রি পলিয়ানস্কি। ওই বৈঠকে গাজায় ইসরায়েলি বন্দিদের প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। পলিয়ানস্কি বলেন, "এই হামলা এমন এক সময় ঘটল, যখন ইসরায়েলি সরকার পশ্চিম তীরে জাতিগত নির্মূল এবং উপনিবেশীকরণের পথ বেছে নিয়েছে। প্রতিদিনই সাধারণ ফিলিস্তিনি এবং বিদেশিরা সেনাবাহিনী ও বসতিবাসীর হামলার শিকার হচ্ছেন।"

তিনি সতর্ক করে বলেন, "গাজা ও পশ্চিম তীর থেকে ফিলিস্তিনিদের যে পরিকল্পিতভাবে বিতাড়িত করা হচ্ছে, তা পুরো অঞ্চলকে নতুন করে বড় ধরণের যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে।"

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুলাইয়ের শুরু পর্যন্ত সময়ে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনা ও বসতিবাসীদের হাতে নিহত হয়েছেন প্রায় ৬৫০ ফিলিস্তিনি, যার মধ্যে ১২১ জন শিশুও রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে আহত হয়েছেন আরও পাঁচ হাজার ২৬৯ জন। যাদের মধ্যে এক হাজারের বেশি শিশু।

রুশ কূটনৈতিক গাড়িতে হামলার পর আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে নিন্দার ঝড় উঠলেও এখন পর্যন্ত ইসরায়েল সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘটনার কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীও হামলাকারী বসতিবাসীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বিশ্লেষকরা বলছেন, পশ্চিম তীরে সহিংসতা এখন আর শুধু ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধেই সীমাবদ্ধ নেই, এটি এখন আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ফেলেছে।

সূত্র : আল জাজিরা