Image description

যুক্তরাজ্যে সাবেক লেবার নেতা জেরে‌মি করবিন ও এমপি জারা সুলতানার নেতৃত্বে গঠিত নতুন বাম রাজনৈতিক দল ‘ইয়োর পার্টি’ এখনই অভ্যন্তরীণ নেতৃত্বের প্রশ্নে দ্বন্দ্বে জর্জরিত। গণতান্ত্রিক ও তৃণমূলভিত্তিক আন্দোলনের প্রতিশ্রুতি দিয়েই দলটির যাত্রা শুরু হলেও কে হবেন শীর্ষ নেতা, তা নিয়ে শুরু হয়েছে স্পষ্ট মতপার্থক্য।

মূল বিরোধ গড়ে উঠেছে করবিন ও সুলতানাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নেতা করা হবে, নাকি একটি উন্মুক্ত ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন হবে তা নিয়ে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, করবিন নেতৃত্ব নির্বাচনে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার পক্ষে। তিনি চান, আসন্ন শরৎকালীন উদ্বোধনী সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্ধারিত হোক। তবে সুলতানা এই মডেল নিয়ে আগ্রহী নন। তিনি সহ-নেতৃত্বের একটি সমঝোতাভিত্তিক কাঠামোর পক্ষপাতী। এটি নিয়ে ইতোমধ্যে কিছু সমর্থক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

অনেকেই বলছেন, সুলতানা যদি প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নেতৃত্ব থেকে এক ধাপ পেছনে সরে এসে প্রতিযোগিতার সুযোগ দিতেন, তাহলে দলের বিশ্বাসযোগ্যতা আরও বাড়ত। এই অবস্থান থেকে ক্ষুব্ধ অনেকে সম্ভাব্য বিকল্প নেতাদের নামও সামনে আনছেন।

এদের মধ্যে রয়েছেন ২৪ বছর বয়সী ব্রিটিশ-ফিলিস্তিনি অ্যাক্টিভিস্ট লেয়াহ মোহাম্মদ। তিনি গত সাধারণ নির্বাচনে ইলফোর্ড নর্থে লেবার মন্ত্রী ওয়েস স্ট্রিটিংকে হারানোর কাছাকাছি পৌঁছেছিলেন। রয়েছেন রেভল্যুশনারি কমিউনিস্ট পার্টির ফিওনা লালি। এই নেতা টিকিট ছাড়াই জনপ্রিয়তা পেয়েছেন।

নজর রয়েছে এমপি আপসানা বেগমের দিকেও। টু-চাইল্ড বেনিফিট ক্যাপ-এর বিরোধিতার কারণে সুলতানার মতো তিনিও লেবার পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। লন্ডনের পপলার ও লাইমহাউসের এমপি আপসানা এখনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও তার বামপন্থি অবস্থান ও সোশ্যালিস্ট ক্যাম্পেইন গ্রুপের ঘনিষ্ঠতা তাকে ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

এদিকে টাওয়ার হ্যামলেটসের আলোচিত মেয়র লুৎফুর রহমানও ইয়োর পার্টিতে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন। সম্প্রতি একটি কমিউনিটি টিভিতে সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন।

আরও এক সম্ভাব্য সহ-নেতা হিসেবে উঠে এসেছেন, তিনি হলেন ট্রেড ইউনিয়ন নেতা ঋষি মহারাজ। সাবেক আরএমটি কর্মকর্তার নেতৃত্বদক্ষতা ও শ্রমিক শ্রেণির সঙ্গে সংযোগ তাকে সুলতানার শক্তিশালী বিকল্প হিসেবে তুলে ধরছে বলে মনে করছেন তার সমর্থকরা।

তবে করবিন ও সুলতানার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বিভাজনের অভিযোগ খারিজ করে বলছে, দলের যৌথ বিবৃতিতে পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, শরৎকালের সম্মেলনে সদস্যরাই সিদ্ধান্ত নেবেন দলের দিকনির্দেশনা ও নেতৃত্ব কাঠামো নিয়ে।

দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও জেরেমি করবিনের ওপর আস্থা অটুট রয়েছে বহু সমর্থকের। বিশেষ করে ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের একটি বড় অংশ নতুন বাম বিকল্প হিসেবে করবিনের নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল।

তবে করবিন যদি নেতৃত্ব বাছাইয়ে ভুল করেন, তাহলে তার খেসারত দিতে হতে পারে পুরো দলকে। এমন মত প্রকাশ করছেন অনেকে। কারণ, এই উদ্যোগ ব্যর্থ হলে শুধু ব্রিটেনেই নয়, গোটা ইউরোপে বাম রাজনীতির একটি নবজাগরণ অসমাপ্তই থেকে যাবে।