Image description
 

বিশ্বখ্যাত বিনিয়োগকারী এবং বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের সাবেক সিইও ওয়ারেন বাফেটের সম্পদের পরিমাণ এখন ১৪৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি। অথচ এত বিশাল সম্পদের মালিক হয়েও তিনি নিজের পুরোনো ওমাহার বাড়িতেই থাকেন, দামি গাড়ির পেছনে দৌড়ান না, এমনকি বন্ধু বিল গেটসকে নিয়ে ম্যাকডোনাল্ডসে খাওয়াতেও কুপন ব্যবহার করেন।

তাঁর অর্থনৈতিক দর্শন শুধু ধনীদের জন্য নয় — বরং তিনি মনে করেন, গরিব মানুষদের অর্থ-জীবনে পরিবর্তন আনতেও এই সহজ কিছু অভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

বাফেট বলেন, "ব্যয় শেষে যা বাঁচে, তা সঞ্চয় নয় — বরং সঞ্চয়ের পর যা থাকে, সেটাই ব্যয় করো।" এই নীতিকে মেনে চললেই ধীরে ধীরে গড়ে উঠতে পারে সচ্ছল ও সুসংহত জীবন। নিচে বাফেটের দৃষ্টিতে ১০টি খরচের অভ্যাস তুলে ধরা হলো — যেগুলো গরিবদের আরও গরিব করে তোলে।

 

১. উচ্চ সুদের ক্রেডিট কার্ড ঋণ – আর্থিক ফাঁদের এক নম্বর পথ
বাফেট বলেন, “আমি যদি ১৮-২০% সুদে ঋণ নিতাম, তাহলে আমি দেউলিয়া হয়ে যেতাম।” ক্রেডিট কার্ডের এই উচ্চ সুদের হার আয় কম থাকা মানুষদের ধীরে ধীরে পেছনে ঠেলে দেয়। যতদিন এই ঋণ শোধ না হবে, ততদিন বিনিয়োগের চিন্তাই বৃথা।

 

২. নতুন গাড়ি কেনা – আপনি মূলত নিজের টাকাই রাস্তায় নামিয়ে দিচ্ছেন
নতুন গাড়ি কেনা মানেই প্রথম বছরেই গাড়ির দাম ২০% কমে যাওয়া। অথচ বাফেট বলেন, “আমি বছরে মাত্র ৩,৫০০ মাইল ড্রাইভ করি, তাই নতুন গাড়ি কেনার প্রয়োজনই হয় না।” বরং সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি কম দামে কিনে চালানোই তার পছন্দ।

৩. লটারি ও জুয়া – বিভ্রান্ত স্বপ্নের পেছনে দৌড়
২০০৭ সালের এক শেয়ারহোল্ডার সভায় বাফেট বলেন, “জুয়া সামাজিকভাবে ঘৃণ্য।” তার মতে, যারা জানে না তারা কী করছে, তাদের জন্যই ঝুঁকি আসে। ধৈর্য ও জ্ঞান দিয়ে ধাপে ধাপে সম্পদ গড়ার পন্থাই নিরাপদ।

৪. বিলাসী খাওয়া-দাওয়া ও বিনোদন – সহজে সন্তুষ্ট থাকা শেখা জরুরি
তিনি বলেন, “আমি একই জিনিস বারবার খেতে পছন্দ করি। প্রয়োজনে ৫০ দিনও টানা হ্যাম স্যান্ডউইচ খেতে পারি।” বিল গেটসকে নিয়ে ম্যাকডোনাল্ডসে গিয়ে কুপন ব্যবহার করার ঘটনা তার সাধারণ জীবনযাত্রার এক উজ্জ্বল উদাহরণ।

৫. আকস্মিক কেনাকাটা – যা দরকার না, তা কেনা মানে প্রয়োজনে বিক্রি করতে হবে দরকারি জিনিস
বাফেট বলেন, “তুমি যদি এমন জিনিস কেনো যেটা তোমার দরকার নেই, তাহলে একদিন এমন জিনিস বিক্রি করতে হবে যেটা তোমার খুব দরকার।” ব্যয়ের আগে প্রতিবার নিজেকে জিজ্ঞেস করো — এটা চাও, না দরকার?

৬. ধূমপান ও খরচবহুল অভ্যাস – ছোট খরচের বড় প্রভাব
“অভ্যাসের শিকল খুব হালকা লাগে, যতক্ষণ না তা খুব ভারী হয়ে যায়।” — এই কথার মাধ্যমে বাফেট বোঝাতে চান, ধূমপানের মতো ছোট ছোট খরচগুলো দিনের পর দিন টাকার গর্ত তৈরি করে। সেই অর্থ সঞ্চয়ে ব্যবহার করলে ভবিষ্যতে লাভবান হওয়া যায়।

৭. নিজেকে শিক্ষিত না রাখা – সেরা বিনিয়োগটি মিস করা
“নিজের উপর বিনিয়োগই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।” বাফেট দিনে ৮০% সময় পড়াশোনায় ব্যয় করেন, এবং বলেন প্রতিদিন একটু করে শেখার মধ্যেই ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক সাফল্যের চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে।

৮. দামি বাসা কেনা – বাড়ি থাকা দরকার আর ‘বড়’ বাড়ি থাকা দরকারি নয়
“আমি যদি ছয়টা বা আটটা বাড়িতে থাকতাম, তাহলে জীবন আরও খারাপ হতো,” বলেন তিনি। ১৯৫৮ সালে মাত্র $৩১,৫০০ ডলারে কেনা ওমাহার বাড়িটাই এখনো তার ঠিকানা। তার মতে, শান্তি আর স্মৃতির চেয়ে দামী বাড়ির বাহারি ছদ্মবেশ মূল্যহীন।

৯. নতুন প্রযুক্তি ও গ্যাজেট – একটার পর একটা আপগ্রেডের ফাঁদ
বাফেট নতুন ফোন বা গ্যাজেট নিয়ে তেমন আগ্রহী নন। তার মতে, আপনি যদি নতুন আপডেটে সত্যিই বাস্তব কোনো উপকার না পান, তাহলে কেবল নতুন বলেই কিছু কেনার দরকার নেই।

১০. ডিজাইনার পোশাক ও ‘স্ট্যাটাস’ জিনিসপত্র – সফলতা মানে নয় বাহ্যিক চাকচিক্য
বাফেট বলেন, সত্যিকারের সফলতা আসে মাথা ও মনোভাব থেকে — ব্র্যান্ডেড জামা বা দামি ঘড়ি পরে নয়। তার পোশাক সবসময়ই সাধারণ এবং টেকসই।

আগে সঞ্চয় করো, পরে খরচ
“সঞ্চয়ের পর খরচ করো, খরচ শেষে সঞ্চয় নয়”— এই এক কথায় ওয়ারেন বাফেটের পুরো অর্থনৈতিক দর্শন। ছোট ছোট খরচের মধ্যে ভবিষ্যতের চিত্র লুকিয়ে থাকে।

অন্যকে দেখানোর জন্য নয়, নিজের জীবন গড়ার জন্যই সিদ্ধান্ত নাও। অপ্রয়োজনীয় খরচ বন্ধ করে নিজের শেখায়, দক্ষতায় ও ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করো — তাহলেই গড়ে উঠবে সচ্ছল জীবনের ভিত্তি।