
ইন্দোনেশিয়া ঘোষণা দিয়েছে, তারা তুরস্কের কাছ থেকে ৪৮টি অত্যাধুনিক ‘KAAN’ ফিফথ-জেনারেশন যুদ্ধবিমান কিনছে। এশিয়ার অন্যতম বাজেট-সংকটে ভোগা দেশটির পক্ষে এত বড় চুক্তি নিঃসন্দেহে আকর্ষণীয়, কিন্তু একইসাথে কিছু প্রশ্নও জাগাচ্ছে—সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো: এই বিল প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত গড়াতে পারে, আর সেই অর্থ কোথা থেকে আসবে?
চুক্তিটি স্বাক্ষর হয়েছে ২৬ জুলাই, ইস্তানবুলে অনুষ্ঠিত IDEF 2025 প্রতিরক্ষা মেলায়। ইন্দোনেশিয়ার পক্ষ থেকে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্যাফরি স্যামসুদ্দিন এবং এয়ার ভাইস মার্শাল ইউসুফ জহৌহারি। তুরস্কের রাষ্ট্রপতি এরদোয়ান আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন যে এই ‘রাষ্ট্র থেকে রাষ্ট্র’ চুক্তিটি প্রায় চূড়ান্ত।
তবে অর্থের কোনো নির্দিষ্ট বিবরণ এখনো দেওয়া হয়নি। Jakarta Post-এর খবরে বলা হয়েছে, চুক্তির আনুমানিক মূল্য হতে পারে ১০ বিলিয়ন ডলার। আর এটাই হলো ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশের জন্য প্রধান দুশ্চিন্তার জায়গা।
ইন্দোনেশিয়ার বাজেট: উচ্চাকাঙ্ক্ষা বনাম বাস্তবতা
যখন ইন্দোনেশিয়া একদিকে KAAN যুদ্ধবিমান কিনছে, অন্যদিকে তারা দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি করা KF-21 প্রকল্পে অর্থ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সেই চুক্তি নতুন করে সাজাতে হয়েছে। তাছাড়া দেশটি ইতোমধ্যে ফ্রান্সের কাছ থেকে ৪২টি Rafale যুদ্ধবিমান কিনেছে, ভবিষ্যতে আরও কিনতে পারে। এ ছাড়া রাশিয়ার Su-35 এবং আমেরিকার F-15EX কেনারও আলোচনা চলছে।
এত ধরনের যুদ্ধবিমান একসাথে কেনা শুধু কেনার খরচই নয়—প্রশিক্ষণ, মেরামত, যন্ত্রাংশ সরবরাহ, এবং দীর্ঘমেয়াদী রক্ষণাবেক্ষণেও বিশাল ব্যয় লাগে। এটি দেশটির প্রতিরক্ষা বাজেটে বাড়তি চাপ তৈরি করবে, বিশেষ করে যখন তাদের সামগ্রিক প্রতিরক্ষা ব্যয় এখনো জিডিপির ১ শতাংশেরও নিচে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতে KF-21 এর চুক্তিতে যেভাবে ইন্দোনেশিয়া বারবার অর্থ না দেওয়ার রেকর্ড রেখেছে, KAAN-এর ক্ষেত্রেও তেমনটা ঘটতে পারে।
তুরস্কের জন্য আশার আলো
তবে তুরস্কের জন্য এই চুক্তি একটি বড় সাফল্য। KAAN যুদ্ধবিমান তুরস্কের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি প্রথম ৫ম প্রজন্মের মাল্টিরোল ফাইটার জেট, যার প্রথম উড্ডয়ন হয় ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এটি হবে অদৃশ্যযোগ্য (stealth), সুপার ক্রুজ ক্ষমতাসম্পন্ন, উন্নত সেন্সর ও অস্ত্র প্রযুক্তিতে সজ্জিত একটি বিমান।
Turkish Aerospace Industries (TAI) এর CEO মেহমেত দেমিরওগল বলেন, “ইন্দোনেশিয়ার এই চুক্তি প্রমাণ করে, বিশ্ব এখন তুরস্কের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির ওপর আস্থা রাখতে শুরু করেছে।” তিনি আরও জানান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আজারবাইজান ও পাকিস্তান KAAN কেনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে।
KAAN এর সিরিয়াল প্রোডাকশন শুরু হবে ২০২৮ সালে এবং প্রথম বিমানগুলো ২০২৯ সালে তুর্কি বিমানবাহিনীর হাতে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইন্দোনেশিয়া তাদের পুরোনো বিমানবাহিনীকে আধুনিক করতে চায়, কিন্তু টাকাটা কোথা থেকে আসবে, সেটা এখনো পরিষ্কার না। অন্যদিকে, তুরস্ক এই রপ্তানির মধ্য দিয়ে তাদের প্রতিরক্ষা খাতকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চায়। প্রশ্ন হলো—এই চুক্তি আদৌ সফল হবে তো?