Image description
 

গাজা যুদ্ধ শুরুর প্রায় ২২ মাস পর এই প্রথমবারের মতো নিজেদের সরকারকেই গাজায় গণহত্যা চালানোর অভিযোগে প্রকাশ্যে দায়ী করল ইসরায়েলের দুটি শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন— বেতসেলেম ও ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস-ইসরায়েল (পিএইচআরআই)। সোমবার প্রকাশিত তাদের বিস্ফোরক প্রতিবেদন দুইটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ওঠা ক্রমবর্ধমান গণহত্যার অভিযোগকে আরও জোরালো করল দেশীয় অভ্যন্তরীণ অবস্থান থেকেই।

পূর্বে প্যালেস্টাইনি জনগণ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ একাধিক মানবাধিকার সংগঠন এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকার করা মামলায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনা হলেও, এতদিন ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ সমালোচকরাও ‘গণহত্যা’ শব্দটি ব্যবহারে বিরত ছিলেন। এর পেছনে প্রধান কারণ ছিল—হলোকস্ট নিয়ে ইসরায়েলি সমাজের ঐতিহাসিক বেদনা ও সংবেদনশীলতা।

তবে বেতসেলেম ও পিএইচআরআই এখন বলছে, গাজায় ধ্বংসযজ্ঞের ব্যাপ্তি, ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের নানা উসকানিমূলক বক্তব্য এবং অবকাঠামো ও জীবনধারার ওপর পরিকল্পিত হামলা—সব মিলিয়ে এটি স্পষ্টতই গণহত্যার ইঙ্গিত বহন করে।

 

পিএইচআরআই-এর প্রতিবেদনটি একটি আইনি ও চিকিৎসা-ভিত্তিক বিশ্লেষণ, যেখানে বলা হয়েছে—ইসরায়েল গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা, পানি, বিদ্যুৎ ও খাদ্য সরবরাহ ধ্বংস করে গাজাবাসীর জীবনধারণের মৌলিক কাঠামো ভেঙে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক আইনে গণহত্যা হিসেবে সংজ্ঞায়িত অন্তত তিনটি কাজ তারা ইতোমধ্যে করেছে বলেও উল্লেখ করা হয়।

 

বেতসেলেম জানিয়েছে, গাজা নিয়ে ইসরায়েলের নীতি এখন কেবল দমন ও নিয়ন্ত্রণে সীমাবদ্ধ নেই, বরং তা রূপ নিয়েছে “সম্পূর্ণ ধ্বংস ও নিশ্চিহ্নকরণের” অভিযানে। দুটি সংস্থাই বহু ইসরায়েলি কর্মকর্তার বক্তব্য তুলে ধরেছে, যেখানে ফিলিস্তিনিদের চূড়ান্ত বিতাড়ন ও ধ্বংসের আহ্বান জানানো হয়েছে—যা তাদের মতে, ‘গণহত্যার উদ্দেশ্যের’ স্পষ্ট প্রমাণ।

পিএইচআরআই-এর পরিচালক গাই শালেভ—যিনি নিজেও একজন হলোকাস্ট বেঁচে যাওয়া ব্যক্তির নাতি—বলেন, “এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত বেদনাদায়ক, কিন্তু অনিবার্য। ইতিহাসের দায় হিসেবে আমাদের সত্যের মুখোমুখি হওয়াটা জরুরি।”

ইসরায়েলি সরকার এখনো এই প্রতিবেদনগুলোর কোনো আনুষ্ঠানিক জবাব দেয়নি। তারা সব ধরনের গণহত্যার অভিযোগ ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ আখ্যায়িত করে তা অস্বীকার করে আসছে। সরকারি কর্মকর্তারা দাবি করেন, তাদের লক্ষ্য কেবল হামাস, এবং বেসামরিক প্রাণহানির জন্য হামাসের মানবঢাল কৌশলই দায়ী।

যদিও ইসরায়েলের অভ্যন্তরে এই প্রতিবেদনগুলোর প্রভাব সীমিতই থেকে গেছে—সেখানে এখনো মূল মনোযোগ ৫০ জন জিম্মিকে ঘিরেই—তবুও সমালোচকরা বলছেন, এই যুদ্ধ ইসরায়েলের নৈতিক ভিত্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

মানবাধিকার সংস্থা দুটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং নীরব ইসরায়েলিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে—তারা যেন গাজাবাসীদের রক্ষায় এগিয়ে আসে এবং সত্য প্রকাশে ভয় না পায়।

“আমাদের দায়িত্ব সত্য বলা এবং ভুক্তভোগীদের পাশে দাঁড়ানো,”—বলেছেন বেতসেলেমের আন্তর্জাতিক পরিচালক সারিত মিখায়েলি।

 

তথ্যসূত্র: এপি নিউজ