Image description

ঘুমন্ত অবস্থায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন গাজার এক পরিবারের সাত সদস্য। নিহতদের মধ্যে ছিলেন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ওয়ালা আল-জাবারী, তার স্বামী ও তাদের পাঁচ সন্তান। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজাজুড়ে ইসরায়েলি হামলা ও গুলিতে ১০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। ঘটনার পর নিহতদের সাদা কাফনে মোড়ানো লাশগুলো পড়ে থাকতে দেখা গেছে ধ্বংসস্তূপের পাশে। নামগুলো হাতে লেখা, রক্তে ভেজা কাফনে ছিল করুণ চিহ্ন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

ওয়ালার আত্মীয় আমর আল-শায়ের বলেন, এটা আমার কাজিন। তার বয়স ১০ বছর। আমরা ধ্বংসস্তূপ থেকে তাদের দেহ টেনে বের করেছি।

আরেক আত্মীয় ইমান আল-শায়ের জানিয়েছেন, বোমাবর্ষণের আগের রাতে পরিবারটি কোনও খাবার না খেয়েই ছাড়াই ঘুমাতে গিয়েছিল।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এ হামলার বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। তবে তারা জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ১২০টি লক্ষ্যবস্তুতে তারা হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আস্তানা, সামরিক কাঠামো, সুড়ঙ্গ ও বিস্ফোরক স্থাপনাসমূহ।’

আত্মীয়দের বরাতে জানা গেছে, খাবারের খোঁজে বাইরে ছিলেন বলে আশপাশের কয়েকজন প্রতিবেশী বেঁচে গেছেন এই হামলা থেকে।

গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রাতের মধ্যে অনাহারে মারা গেছেন আরও ১০ ফিলিস্তিনি। এ নিয়ে গাজায় অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১১১ জনে। এদের বেশিরভাগই সম্প্রতি মারা গেছেন।

জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, এ বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত অপুষ্টিতে মারা যাওয়া শিশুদের মধ্যে ৫ বছরের নিচে ২১ জন রয়েছে।

এক যৌথ বিবৃতিতে ১১১টি আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা, যেমন মার্সি কর্পস, নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল ও রিফিউজিস ইন্টারন্যাশনাল অভিযোগ করেছে, খাদ্য, পানি ও চিকিৎসাসামগ্রী গাজার ঠিক বাইরেই আটকে আছে। অথচ ভেতরে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ছে।

ইসরায়েল মার্চের শুরু থেকে গাজার সব রকমের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে মে মাসে সীমিত আকারে পুনরায় চালু করে। তারা বলছে, সাহায্য যেন হামাসের হাতে না পড়ে, সে কারণে কড়া নিয়ন্ত্রণ জরুরি। দেশটির দাবি, যুদ্ধকালীন পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ করা হয়েছে, আর ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগের জন্য হামাসই দায়ী।

ইসরায়েলের মুখপাত্র ডেভিড মার্সার জানান, গাজার ভেতরে ৭০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক অপেক্ষা করছে। অথচ জাতিসংঘ তা গ্রহণ করতে দেরি করছে। সময় এসেছে তারা দায়িত্ব নিক, ইসরায়েলকে দোষারোপ বন্ধ করুক।

জাতিসংঘ ও ত্রাণ সংস্থাগুলোর দাবি, গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকা ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে সরবরাহ ব্যাহত করছে। মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত শত শত ফিলিস্তিনি ত্রাণ সংগ্রহের জায়গার কাছে গুলি খেয়ে মারা গেছেন।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির জরুরি বিভাগের পরিচালক রস স্মিথ বলেন, ত্রাণ বিতরণের জন্য ন্যূনতম কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। আমাদের কনভয় ও বিতরণ কেন্দ্রে কোনও অস্ত্রধারীর উপস্থিতি থাকা চলবে না।

ইসরায়েলের জাতিসংঘ দূত ড্যানি ড্যানন ঘোষণা করেছেন, জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিভাগের আন্তর্জাতিক কর্মীদের জন্য এখন থেকে এক মাসের ভিসা দেওয়া হবে।

হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধ চলছেই। ইতোমধ্যে যা দুই বছর পেরিয়ে গেছে। ২০২৩ সালের হামাস হামলায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত এবং ২৫১ জনকে অপহরণ করার পর থেকেই যুদ্ধ শুরু হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল প্রায় ৬০ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। গাজার অধিকাংশ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে।

মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য শান্তি দূত স্টিভ উইটকফ নতুন করে যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু করতে ইউরোপ সফরে যাচ্ছেন। কাতার ও মিসরের মাধ্যমে চলমান মধ্যস্থতায় একাধিক প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে।

রয়টার্সকে দেওয়া এক বিবৃতিতে একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা জানান, হামাস মধ্যস্থতাকারীদের কাছে তাদের প্রতিক্রিয়া জমা দিয়েছে। তবে বিস্তারিত জানানো হয়নি। আলোচনায় অচলাবস্থার প্রধান দুটি শর্ত হলো—ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের রূপরেখা ও যুদ্ধবিরতির সময় ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা।

ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হার্জগ গাজা সফরে গিয়ে বলেছেন, জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলছে। শিগগিরই আশাব্যঞ্জক খবর শোনা যেতে পারে।

তবে ইসরায়েলি সরকারে থাকা কট্টর ডানপন্থিরা যুদ্ধ থামানোর চুক্তির বিরোধিতা করছে। অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ বলেন, আমি যদি মনে করি সরকার দুর্বলতা দেখাচ্ছে বা আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে, তবে আমি এক মুহূর্তও সরকারে থাকব না।