Image description

লেবাননের সংসদ বৃহস্পতিবার দেশটির সেনাপ্রধান জোসেফ আউনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছে। এতে দেশটিতে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা ক্ষমতার শূন্যতার অবসান ঘটল।জোসেফ আউনের প্রার্থিতাকে সমর্থন করেছে একাধিক রাজনৈতিক দল, পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও সৌদি আরব। এ ছাড়া হিজবুল্লাহ সমর্থিত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বুধবার তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে সেনাপ্রধানকে সমর্থন জানান।দেশটির সাম্প্রদায়িক ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রথা অনুযায়ী প্রেসিডেন্সি একটি মূলত আনুষ্ঠানিক পদ, যা একজন খ্রিস্টানের জন্য সংরক্ষিত।লেবাননে এ নির্বাচনটি এমন সময় অনুষ্ঠিত হলো, যখন লেবাননের সরকার ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের পর ছয় সপ্তাহ আগে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি করে, যা ইরান সমর্থিত শিয়া গোষ্ঠীটিকে উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল করেছে। লেবাননের সেনাবাহিনী ওই সংঘর্ষে অংশ নেয়নি। তবে যুদ্ধবিরতির আওতায় তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

 
এই চুক্তি অনুযায়ী, দক্ষিণ লেবাননে সেনা মোতায়েন ও ২৬ জানুয়ারির মধ্যে হিজবুল্লাহর সশস্ত্র উপস্থিতি শেষ করা নিশ্চিত করবে সেনাবাহিনী।৬০ বছর বয়সী আউন একজন পেশাদার সেনা, যিনি ২০১৭ সাল থেকে লেবাননের সেনাবাহিনীর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই সময়ে তিনি এমন একাধিক গভীর সংকটের মধ্যে দিয়ে সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, যা লেবাননকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। এসব সংকটের মধ্যে রয়েছে ১৩ মাসব্যাপী হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল সংঘাত, আধুনিক সময়ের অন্যতম ভয়াবহ ছয় বছরের অর্থনৈতিক মন্দা এবং ২০২০ সালে বৈরুত বন্দরে বিস্ফোরণ, যা ২০০ জনেরও বেশি প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল।

লেবাননে ২০২২ সালের মে মাসে গত সংসদ নির্বাচনের পর থেকে কার্যকর সরকার নেই। তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য সমর্থন জোগাড় করতে ব্যর্থ হন, যার ফলে সেই বছরের অক্টোবরে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মিশেল আউনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রশাসনের ক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়ে। এরপর আইন প্রণেতারা ১২ বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে ব্যর্থ হন। সর্বশেষটি ছিল ২০২৩ সালের জুনে, যখন কোনো প্রার্থী প্রথম রাউন্ডে পর্যাপ্ত ভোট পাননি এবং হিজবুল্লাহ ও তাদের মিত্র আমাল দ্বিতীয় রাউন্ড বর্জন করেন।  লেবাননে সাধারণত প্রেসিডেন্ট প্রথম রাউন্ডে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা বা ৮৬ ভোট পেলে নির্বাচিত হন।

 
দ্বিতীয় রাউন্ডে তা সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সম্ভব। তবে স্পিকার নাবিহ বেরি জানান, আউন যেহেতু বিদ্যমান সেনাপ্রধান, তাই তাকে যেকোনো রাউন্ডে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেতে হবে। বৃহস্পতিবার সকালে প্রথম রাউন্ডে আউন ৭১টি ভোট পান, যা তার প্রয়োজনীয় ভোটের চেয়ে ১৫টি কম। হিজবুল্লাহ ও আমালের অনেক সদস্যসহ ৩৭ জন আইন প্রণেতা ফাঁকা ব্যালট দেন এবং ২০টি ব্যালট অবৈধ ঘোষণা করা হয়। বেরি তখন অধিবেশন দুপুর পর্যন্ত মুলতবি করেন, যা দ্বিতীয় রাউন্ড তাৎক্ষণিকভাবে করতে চাওয়া আইন প্রণেতাদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করে।  

 

পরবর্তীতে দ্বিতীয় রাউন্ডে আউন ৯৯ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, যা প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার চেয়ে অনেক বেশি। ৯টি ফাঁকা ব্যালট ও ১৮টি অবৈধ ব্যালট ছিল। স্পিকার ফলাফল ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে টেলিভিশনে সারা দেশে উদযাপনের দৃশ্য দেখা যায়। পরে আউনকে স্যুট পরে সংসদ ভবনে আসতে দেখা যায়। তিনি গার্ডদের পরিদর্শন শেষে চেম্বারে প্রবেশ করে শপথ গ্রহণ করেন।

সূত্র : বিবিসি